Monday , 2 December 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
আবারও আলোচনায় মঈনুল রোডের সেই বাড়ি
--সংগৃহীত ছবি

আবারও আলোচনায় মঈনুল রোডের সেই বাড়ি

অনলাইন ডেস্কঃ
‘আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই তো এই ক্যান্টনমেন্ট! আমি এই ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা! সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। যেদিন সুযোগ পাব বের করে দেব। বের করে দিয়েছি।’হাসিনার প্রতিহিংসায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন শহীদ জিয়ার স্মৃতিনিবাস। গত বছর ২ অক্টোবর ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এই স্বীকারোক্তি করেছিলেন; যদিও ক্যান্টনমেন্টের ওই ঘটনার চার বছর আগে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি ওই ভবন থেকে জিয়া পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সেই অমানবিক ঘটনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের সহধর্মিণী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা এবং দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তার সন্তান-সন্ততির জন্ম ও বেড়ে ওঠার নানা দুর্লভ স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে ওই ভবনেই।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের মতে, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো ফাংশনাল ছিল না। বিচার বিভাগও এর বাইরে ছিল না। উচ্চ আদালত হচ্ছে সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতিতে যা বলতেন, উচ্চ আদালতে তারই প্রতিফলন ঘটত। খালেদা জিয়াকে তার মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওই ঘটনায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক, অন্যায়।’সেই ১৩ নভেম্বর এবং শেখ হাসিনার ওই স্বীকারোক্তি আবারও আলোচনায় গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতির কারণে। ওই অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত ও গর্বিত যে এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে।’ এর পর থেকেই বিএনপি নেতাদের দাবি, মঈনুল রোডের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বাস্তবতা :

গত বছর ২ অক্টোবর স্বীকারোক্তির সময় শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের কারণে যে মামলার কথা বলেছিলেন সেটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সে সময় একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হন লেখক ও ভাষাবিদ অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হলে শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে দেখতে যান।

শেখ হাসিনার অভিযোগ ছিল, সেনানিবাসের প্রবেশপথে তার গাড়ি আটকে দেওয়া হলে তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হেঁটে সিএমএইচে পৌঁছেন। অন্যদিকে সে সময় আইএসপিআর জানিয়েছিল, তিনি সেনানিবাসের নিয়ম-শৃঙ্খলা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক শোডাউন করেছেন।

এ বিষয়ে ব্রিটেনের ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছিল, ‘নামলাম, নেমেই হাঁটা শুরু করলাম। আমি যখন হাঁটতে শুরু করেছি তখন অনেক লোক জমা হয়ে গেছে। চার কিলোমিটার হেঁটে আমি সিএমএইচে গেলাম। ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় হাঁটলাম কেন? আমার সঙ্গে যারা ছিল সবার বিরুদ্ধে মামলা দিল।’

১৩ নভেম্বর যা ঘটেছিল :

২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে তার ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ফজরের নামাজের আগে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন মঈনুল রোডের ওই বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেন। সকালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আরো লোকজন। জাহাঙ্গীর গেটসহ সেনানিবাসে প্রবেশমুখের রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

সকাল ৮টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন বাবুর্চিসহ খালেদা জিয়ার বাসায় যারা কাজ করতেন তাদের এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনকে বের করে দেন। সকাল ১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ ও র‌্যাব বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির ভেতর ও বাইরে থেকে মাইকে খালেদা জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলা হয়। খালেদা জিয়া তখন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চান।

কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসতে তাগিদ দেন। খালেদা জিয়া তাদের কথামতো বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে বাইরে বের করে এনে গাড়িতে তোলে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি ওই উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও ধারণ করেন। মুস্তাফিজুর রহমান পরে লে. কর্নেল পদে থেকে অবসর নেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।

গত রবিবার তিনি বলেন, ‘আমি আমার ইউনিটের চারজন সৈনিক নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সেদিন সরকার প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্বটা ছিল স্পর্শকাতর ওই উচ্ছেদ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে আমার অধিনায়ক ও ডিরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সকে তাত্ক্ষণিকভাবে জানানো। আমি নিজে সেদিন উচ্ছেদ কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ করি। সেখানে আরো দুটি ভিডিও ক্যামেরা সচল ছিল। ডিজিএফআইয়ের চার-পাঁচজন কর্মকর্তা ছিলেন।

র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জিয়াউল আহসানও [সম্প্রতি চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দি মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান] এসেছিলেন তার ব্রেক ইন ডিটাচমেন্ট নিয়ে। এই ব্রেক ইন ডিটাচমেন্টের কাজ হচ্ছে হাই পাওয়ার হ্যাকস প্লাইয়ার্স দিয়ে তালা বা গ্রিল কেটে বাসাবাড়িতে ঢোকা। হ্যাকস প্লাইয়ার্স দিয়েই প্রবেশপথের দরজা খোলা হয়।’

লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগেই শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দেওয়ার জন্য একটা প্ল্যান লে-আউট হয় বলে জেনেছিলাম। প্ল্যানটি ছিল খালেদা জিয়াকে উচ্ছদ করার পর ওই ভবনের নাম-নিশানা মুছে দিতে সেনা কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য দ্রুত কয়েকটি ভবন তৈরি করার।

কিন্তু যেহেতু বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত, সে কারণে পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচার করা হয়, ওই জায়গায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোর বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।’

১৩ নভেম্বরের ঘটনায় লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমানের ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ তিনি ই-মেইলে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠান। এসব ভিডিও ক্লিপের একাংশ এবং মুস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা দরজা ভাঙার বিষয়ে খালেদা জিয়াকে বলছেন, ‘আপনাকে অনেকক্ষণ বলা হয়েছে, আপনাকে আসতে হবে। আপনি সহযোগিতা করেন নাই। এ জন্য বাধ্য হতে হয়েছে।’ এ ছাড়া ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো দরজা ভাঙা হয়নি। দরজা রিপেয়ার করে দেব।’

মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম তিনি এখন মনে করতে পারছেন না। তবে তিনি ছিলেন তিনটি স্টার (ফোর পয়েন্টেড স্টার) ব্যাজ ধারণকারী একজন কর্মকর্তা।

তিনি আরো জানান, উচ্ছেদের পরের দিন সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তার ফ্রিজে ও বিছানায় আপত্তিকর কিছু রেখে দেওয়া হয়। ডিজিএফআইয়ের মেজর পদবির একজন কর্মকর্তা এই কাজটি করেন। তবে তিনি নিশ্চয় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া এই জঘন্য কাজটি করেননি।

ভিডিও ক্লিপে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুরুষকেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায়। এদের একজন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুুছ সাদাত সেলিম। খালেদা জিয়া তাদের বলছিলেন, আপিল বিভাগ ২৯ তারিখ (২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর) ডেট দিয়েছে। শুনানির সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অন্য পক্ষের বক্তব্য, ‘হাইকোর্টের আদেশের ওপর আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেননি। সে কারণে অপেক্ষা করব না।’ এ সময় একজন বলেন, ‘ধরে নিয়ে আয়।’

ভিডিও ক্লিপে আরো দেখা যায় খালেদা জিয়াকে বাইরে বের করে আনা হলে তিনি অসহায়ভাবে বহুদিনের ওই স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির দিকে চেয়ে দেখছিলেন।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব ড. মো. সুরুতুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি।’

খালেদা জিয়ার কান্না : উচ্ছেদের দিন সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়া তাকে জোর করে, এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাকে আমার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। যেভাবে আমাকে অপমান করা হয়েছে, তাতে আমি অপমানিত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত বোধ করছি। প্রথমে আমার বাড়ির গেটের নেট কাটা হয়। এরপর তালা ভাঙা হয়।

এরপর আমার স্টাডি রুমে ঢুকে জিনিসপত্র টানাটানি শুরু করে। আমার বেডরুমের দিকে যেতে চাইলে কাজের লোকজন বাধা দেয়। এর পরও তারা জোর করে আমার বেডরুমে ঢোকে। আমি প্রথমে চেয়ারে বসা ছিলাম। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতে বলা হয়। আমি উঠতে চাইনি। এ সময় কেউ কেউ বলেছে, প্রয়োজনে কোলে উঠিয়ে নিয়ে আসো। তারা আমাকে জোর করে চেয়ার থেকে টেনে উঠিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি এর বিচার কার কাছে চাইব? বিচারের ভার আল্লাহ তাআলা ও দেশবাসীর কাছে দিলাম। আমি সারা দিন কিছু খেতে পারিনি। তারা প্রচারণা করছে, আমি নিজের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসিনি।

তারা আমাকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে। আমার জিনিসপত্র টানতে টানতে নিয়ে এসেছে। কাজের লোকদের ধরে নিয়ে গেছে। তারা আমাকে নিয়ে আসতে চাইলে আমি বলেছি, আইনজীবীদের ছাড়া আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তখন তারা বলেছে, কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমার পরিবারের সদস্যদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।’

খালেদা জিয়া ওই দিন আরো বলেন, ‘আমি এ বাড়িতে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি। জীবনের অনেক স্মৃতি এই বাড়ির সঙ্গে জড়িত। জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেই স্মৃতিগুলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো। সরকার প্রথমে অহেতুক বাড়িটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে। পরে বেআইনিভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাড়ির বিরুদ্ধে রায় দেয়। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করি। একটি মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নজির কোথাও নেই। এতে করে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।’

উচ্ছেদ নিয়ে মিথ্যাচার :

খালেদা জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে সন্ধ্যায় আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় তার সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে ৬ শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন।’ আওয়ামী লীগের পক্ষেও সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, ‘স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন।’

খালেদা জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়ের পর আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলে, ‘তিনি বাসা ছেড়ে দিতে অহেতুক কালক্ষেপণ করেন। এই অবস্থায় দুজন মহিলা পুলিশ সদস্য তার রুমের জানালায় টোকা দিলে তিনি উত্তেজিত আচরণ করেন।’ বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলেও আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।

এর জবাবে বিএনপি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনার সময় আইএসপিআরের কোনো সদস্যই সেখানে ছিলেন না, সেনা সদস্যরাও ছিলেন না। আইএসপিআরকে দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার দায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ওপরই বর্তাবে।

বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যে কারণে :

ঢাকা সেনানিবাসের ৬ শহীদ মঈনুল রোডের বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবেই পরিচিত। এ বাড়িটি নিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত অনুভূতিও গভীর আবেগের। ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে এ বাড়িটিতে সপরিবারে বসবাস করতেন জিয়াউর রহমান।

সেনাপ্রধান হওয়ার পর তিনি সেনাপ্রধানের নির্ধারিত বাসভবনে না উঠে এই বাড়িতেই থেকে যান। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ এ বাড়িতেই জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে অন্তরিন করেন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিপাহি-জনতা তাকে মুক্ত করে। এরপর রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শহীদ জিয়া এ বাড়িতেই থেকেছেন।

এই বাড়িতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের সন্তানদের শৈশব এখানেই শুরু হয়।

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শাহাদাতবরণের পর ওই বছর জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাড়িটি। তৎকালীন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেয়।

৬ শহীদ মঈনুল রোডের বর্তমান অবস্থা :

২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের তিন মাসের মধ্যেই শহীদ মঈনুল রোডের সেই তিনতলা বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ির বদলে সেখানে দেখা যায় ফাঁকা মাঠ। পরের বছর ২৮ জুন সেখানে দেখা যায় বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর দেখা যায় একটি ১৪ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পথে।

বর্তমানে শহীদ মঈনুল রোডের ওই এলাকায় স্থান করে নিয়েছে আরশি, পড়শি, গাগরি, বিহঙ্গ ও আগামী নামের পাঁচটি বহুতল ভবন। প্রতিটি ভবনে ৫২টি সেনা কর্মকর্তা পরিবারের বাস। আরশি ও পরশি লে. কর্নেলদের জন্য। আর গাগরি, বিহঙ্গ ও আগামী মেজর পদবির সেনা কর্মকর্তাদের জন্য। এই পাঁচটি ভবন ছাড়াও সেখানে মসজিদ, প্লেগ্রাউন্ড—এসব আনুষঙ্গিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply