সম্প্রতি র্যাব-৭ (চট্টগ্রামে) এ কর্মরত অবস্থায় সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে বড় ভাই লিটন সাহা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেছেন, আমাদের দুই পরিবার নিয়ে বিভিন্নজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া সব কথা লিখছেন। বিভিন্নজন নিজেদের মতো করে কনটেন্ট তৈরি করছেন। আপনাদের কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি, আপনারা এসব বন্ধ করুন। আমাদের দুটি পরিবারকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।
আজ মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকল গণমাধ্যম, ফেসবুক ব্যবহারকারী, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি এ আকুতি জানান।
তিনি বলেন, ২০০৩ সালে আমার বাবা মারা যায়। তখন আমার ছোট ভাই পুলিশের সাবেক সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও আরেক ভাই নন্দলাল সাহা নবম শ্রেণিতে পড়ত। আমি তখন বিএসসিতে অধ্যয়নরত ছিলাম।
বাবা মৃত্যুর আগে আমাকে বলে যায়, ‘তোর দুই ভাই ও মাকে দেখে রাখিস। ভাই দুজনকে এমএ পাশ করাইস’। আমি বাবার কথা রেখেছি। আমার লেখাপড়া বাদ দিয়ে টিউশনি করে আমার ছোট দুই ভাইকে এমএ পাশ করিয়েছি।
ওদের কোনো দুঃখ কষ্ট বুঝতে দেইনি। আমি ভাই হিসেবে নয়, ওদেরকে সন্তান হিসেবে বড় করেছি। আজ আমার সেই সন্তানতুল্য ভাই পলাশ পৃথিবীতে নেই! আমার মা তার ছেলেকে হারিয়েছে, পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা তার স্বামীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি যে কি হারিয়েছি তা কাউকে বুঝাতে পারব না।কান্নাজাড়িত কণ্ঠে লিটন সাহা বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করছি না।
আজকে প্রায় ৭ দিন হয়ে গেলেও আমি আমার ভাইয়ের জন্য ধর্মীয় কোনো কাজ করতে পারছি না। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ভাইয়েরা আমাদেরকে একটু সুস্থ থাকতে দিচ্ছেন না। যতদূর হয়েছে আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করুন। ধর্মীয় এবং সামাজিকভাবে পলাশের স্ত্রী এখনও আমাদের পরিবারের সদস্য। যেহেতু পলাশ আমার সন্তানের মতো ছিল তাই আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন তার পরিবারের পাশে থাকব।
উল্লেখ্য গত বুধবার (৭ মে) দুপুরে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের জের ধরে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের ক্যাম্পের নিজ অফিস কক্ষে আত্মহত্যা করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলার পারকোনা মহাশ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় সাহার ছোট ছেলে। ৩৭তম বিসিএস এ পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন।