ঢাকার অপরাধজগতের ত্রাস ও দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়ার একটি বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, সুব্রত বাইন ‘সেভেন স্টার’ বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
১৯৯১ নির্বাচনে তিনি মগবাজার এলাকায় কাজ করেন। সে সময় যুবলীগের লিয়াকত মগবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খুব কাছের লোক হয়ে যান। মগবাজারের মধুবাগ মাঠে তার জন্মদিনের উৎসব হয়। সেই উৎসবে বিএনপির অনেক নেতা হাজির হওয়ার পর থেকে সুব্রত বাইন তারকা সন্ত্রাসী বনে যান। এরপর ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারে নেতৃত্ব দেন সুব্রত। এ ছাড়া মগবাজারের রফিক, সিদ্ধেশ্বরীর খোকনসহ বেশ কয়েকজন তার হাতে খুন হন। এভাবে খুব অল্প সময়ে রাজধানীর দক্ষিণাংশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ সুব্রত বাইনের হাতে চলে আসে। তার বিরুদ্ধে সে সময় কমপক্ষে ৩০টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে আগারগাঁওয়ে মুরাদ খুনের ঘটনায় তার যাবজ্জীবন হয়।
১৯৯৭ সালে নয়াপল্টন এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশের এসি আকরাম হোসেন গ্রেপ্তার করেন সুব্রত বাইনকে। বছর দেড়েক জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে যান। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এ তালিকায় প্রথম নাম ছিল সুব্রতর। তার নামে ইন্টারপোলেও নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর সুব্রত ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়েন।
ভারতে গিয়ে সেখানে জমি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যাবতীয় নথিপত্র তৈরি করেন সুব্রত। সুব্রতর ছোট বোন চেরির স্বামী অতুল জানান, সুব্রতর ভারতীয় নাগরিকত্বের সব কাগজপত্র আছে। এর পরও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর কলকাতা পুলিশ তাকে আটক করে। তবে বেশি দিন জেলে থাকতে হয়নি। জামিন পেয়ে দুবাই চলে যান। সেখান থেকে ফিরে কলকাতার এক চিত্রনায়িকার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। সেই ফোন কলের সূত্র ধরে ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাকে ধাওয়া করে।
টাস্কফোর্সের তাড়া খেয়ে সুব্রত নেপালের সীমান্ত শহর কাঁকরভিটায় ঢুকে পড়েন এবং নেপালি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। প্রথমে তাকে পূর্ব নেপালের ভাদ্রপুর এবং পরে ঝুমকা কারাগারে নেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সেই কারাগার থেকে ৭৭ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে যান। আবার কলকাতায় আসার কয়েক দিন পর ২৭ নভেম্বর বউবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কলকাতার জেলেই আটক ছিলেন।
কলকাতা থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন সুব্রত বাইন। সড়ক ও জনপথের বড় বড় ঠিকাদারির কাজ ভাগাভাগি করতেন। সেই চাঁদার টাকায় নদীয়ায় ৫০ বিঘা জমিসহ এক বাগানবাড়ি কেনেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের পরিবার রাজধানীর মগবাজারে থাকত। পরে তাঁরা গাজীপুরের পুবাইল হারবাইদ নয়াপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি করেন। এখন সেখানেই থাকেন সুব্রত বাইনের বাবা বিপুল বাইন ও মা কুমুলিনি বাইন।