সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে তীব্র আলোচনা উঠেছে। দায়িত্ব থেকে সরে আসার পর কি উপদেষ্টাদের জীবনের নিরাপত্তা এতটা ঝুঁকিতে পড়ে যে পালিয়ে যেতে হয়?’ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, “ক্ষমতা ছাড়ার পর সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করাই হচ্ছে আসল সৌন্দর্য। তাহলে কেন এমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং ‘সেফ এক্সিট’ কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে?”
বুধবার (৮ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার বলেছেন, “আমার মনে হয়েছে, আজ যে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেখানে আরো কিছু সমস্যা আছে।
যেমন, তারা (নাহিদ ও সারজিস) বারবার উপদেষ্টা পরিষদকে ‘সেফ এক্সিট’ বলছেন। কিন্তু সেফ এক্সিট মানে কী? এক্সিট কি অনারেবল হবে? পদ থেকে সরে গেলেই কি অনিরাপদ হয়ে যায়? তাহলে কি পদেই আপনার জীবনের নিরাপত্তা? আপনি পদে থাকলে নিরাপদ, আর পদ ছাড়লেই অনিরাপদ হয়ে যাবেন?”আব্দুন নূর তুষার আরো বলেন, “আপনি প্রস্থান করবেন এবং প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন—এটাই প্রস্থানের সৌন্দর্য। আপনি ক্ষমতায় থাকাকালীন এক রূপে ছিলেন আর ক্ষমতার বাইরে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়াই তো ক্ষমতার আসল সৌন্দর্য। কিন্তু সেই সৌন্দর্য বাদ দিয়ে নাহিদ-সারজিসরা বারবার বলছেন, ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিলে মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
’—এভাবে ভয় দেখানোর মানে কী?”মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আব্দুন নূর তুষার যথার্থই বলেছেন। উপদেষ্টাদের দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়া হচ্ছে ক্ষমতার সৌন্দর্য। ক্ষমতায় আমি দায়িত্ব পালন করেছি আর দায়িত্ব শেষ হলে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন—এটাই আসল সৌন্দর্য।’
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম বলছেন, কিছু উপদেষ্টার ‘সেফ এক্সিট’ প্রয়োজন হবে কারণ তারা দুর্নীতিতে জড়িত।
তাই সেফ এক্সিটের বিষয়টি ভাবতে হবে। আবার সারজিস আলম বলেছেন, ‘মৃত্যু ছাড়া সেফ এক্সিট নেই’? এখন প্রশ্ন হলো—উপদেষ্টারা এমন কী করেছেন যে তারা পদ ছাড়লেই সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারবেন না? তাদের পালাতে হবে।মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টা এসেছেন, গেছেন কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে এখন হবে কেন? আমরা বারবার কেন বর্তমান পরিস্থিতিকে আওয়ামী লীগ আমলের সঙ্গে তুলনা করি? ওটা তো ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসন ছিল, যেখানে তারা মানুষের ওপর নির্যাতন, দমনপীড়ন, দুর্নীতি, ও টাকা পাচারের মতো কাজ করেছে। তাই গণ-অভ্যুত্থানে তাদের পতন হলে ‘সেফ এক্সিট’ বলতে পালিয়ে যাওয়াকেই বোঝানো হয়—যেমন মিসরে হয়েছিল।
কিন্তু আমি মনে করি, নেপালের সরকার বা অন্য দেশের শাসকরা তো পালায়নি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য শুধু আওয়ামী লীগের নেতাদেরই পালাতে হয়েছে। অতীতে বিএনপিকে পালাতে হয়নি, জাতীয় পার্টিরও হয়নি—তাহলে এখন কেন ‘সেফ এক্সিট’ কথাটা এত ভয়ংকর শোনাতে হবে?তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়েই আলোচনা হয়। সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, যদি উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ নিতে হয়, তাহলে সবার ওপরে থাকবে আসিফ মাহমুদ সজীব। তবে আমি এই মন্তব্য নিজে করতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই-তিন বা বড়জোর চারজনকে নিয়ে বিতর্ক বা আলোচনা হয়। এই বিষয়গুলো যদি ড. ইউনূস সাহেব একটু কঠোর হতেন তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু উনি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি হয়তো ভাবছেন—‘যাক, কয় দিন আছি, বিতর্কের মধ্যে না যাই, তাদের কষ্ট না দিই।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, এখন মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাদের নিজেদের উপলব্ধি থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার স্বার্থে নির্বাচনের আগেই তাদের চলে যাওয়া উচিত। যেহেতু তারা এনসিপি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। যদি তারা এনসিপি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে সেভাবে একটি স্টেটমেন্ট দেওয়া প্রয়োজন। তাদের বলতে হবে ‘আমাদের এনসিপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ এটা বলা ভালো হবে, এতে আমরা কিছুটা নিশ্চিন্ত হই আর এই ধরনের নাম নিয়ে বারবার আলোচনা করতে হবে না। কিন্তু নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম যে ভয় দেখাচ্ছেন, সেটা কেন?
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমার মনে বারবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা পড়ে। তিনি জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে বলেছেন, ‘শাসনকাজ পরিচালনা করা আমাদের দায়িত্ব। দায়িত্ব শেষ হলে আমাদের নিজেদের পেশায় ফিরে যাওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, “এই অবস্থায় এনসিপির নেতারা কেন হতাশ। হয়তো তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না। তাদের যথেষ্ট সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ঘুরেও তারা নিরাপদ ছিলেন। এই সময় তাদের সরকার প্রটেকশন দিয়েছে, খরচসহ সবই সরকারের প্রটোকলে ছিল। গোপালগঞ্জ থেকে তাদের উদ্ধার করা, সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়া—সবই সরকার করেছে। তার পরও এখন তারা বলছে, ‘মৃত্যু ছাড়া সেফ এক্সিট নেই।’ আবার সেফ এক্সিটের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছে। এর মানে কি আগে তাদের অধীনে ছিল এখন চলে গেছে বিএনপি-জামায়াতের অধীনে? এভাবে ভয় দেখানো কি সঠিক?”