চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সুযোগে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল–বোঝাবুঝির’ অবসানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের কোনো চিঠি ড. ইউনূস পাননি।
এদিকে দুর্নীতি ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া টিউলিপ সিদ্দিকের চ্যালেঞ্জ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিতকে নাড়িয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে টিউলিপের দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গ তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন তিনি।তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসের লন্ডনের সফর, টিউলিপ সিদ্দিকের চ্যালেঞ্জের জন্য বিরাট অস্বস্তিকর হয়ে থাকবে। এ অস্বস্তি দুদকের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির যে অভিযোগগুলো আসবে, তার সবগুলোকে সন্দেহের দিকে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের আগে সাক্ষাৎ চেয়ে টিউলিপের দেওয়া চিঠির বিষয়টি লন্ডনের সবগুলো মিডিয়া খুব গুরুত্বসহকারে দেখছে।
আরিফ জেবতিক বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, সেটার মাধ্যমে শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতির সব অভিযোগ খোলাসা হয়ে যাবে। কারণ ড. ইউনূস যদি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বসেন, তাহলে টিউলিপ সিদ্দিক এটা প্রমাণ করতে পারবেন বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোনো দুর্নীতির সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক লিখেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগ এবং তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ‘ভুল-বোঝাবুঝির’ অবসান হবে।
চিঠিতে টিউলিপ লেখেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক, আমার জন্মস্থান লন্ডন। আমি এক দশক ধরে পার্লামেন্টে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। বাংলাদেশের প্রতি আমার আবেগ আছে, তবে আমি সেখানে জন্মগ্রহণ করিনি, বসবাস করি না—এমনকি সেখানে আমার কোনো ব্যাবসায়িক স্বার্থও নেই। আমি বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে চাইলেও তারা লন্ডনে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক নয়।’
দুদক বারবার রাজধানী ঢাকার একটি অজানা ঠিকানায় আমার নামে চিঠিপত্র পাঠাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘তাদের কল্পনাপ্রসূত এই তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ গণমাধ্যমে জানানো হচ্ছে, কিন্তু আমার আইনজীবী দলের সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগ করেনি।
আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, এসব অভিযোগ কিভাবে আমার পার্লামেন্টারি দায়িত্ব ও দেশের প্রতি অঙ্গীকারকে ব্যাহত করছে।’
গত বছর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী পর্যায়ের মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনেস টিউলিপকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলেও টিউলিপ সিদ্দিক নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন।