Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
দূরদূরান্ত থেকে বিহারে আসতে শুরু করেছে হাজারো পূণ্যার্থী
--প্রেরিত ছবি

দূরদূরান্ত থেকে বিহারে আসতে শুরু করেছে হাজারো পূণ্যার্থী

রাঙামাটি প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে । পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে ৩-৪ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দানোত্তম ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দানোৎসবকে ঘিরে পুরো পাহাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। দূরদূরান্ত থেকে বিহারে আসতে শুরু করেছে হাজারো পূর্ণার্থী। ৩ নভেম্বর বেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দু’দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এ মহাপুণ্যাযজ্ঞ। আর মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই দানোৎসবে ঘিরে তিন পার্বত্যজেলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এবং ধর্মযাজক এ উৎসবে যোগ দিবেন। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে সর্ববৃহৎ পরিসরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই চীবর দানানুষ্ঠান। কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও রাজবন বিহারের এই চীবর দানানুষ্ঠান এখন পরিনত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। ধর্মীয় সকল আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি রাজবন বিহারে চীবর দানানুষ্ঠান কেন্দ্র করে সকল ধর্মালম্বী লোকজনের সমাগম ঘটে। বিহার ঘুরে দেখা যায়, বিহারের আশ-পাশ পরিষ্কার-পরিছন্ন, সাজ-সজ্জা, বেইন ঘর প্রস্তুতি এবং প্যান্ডেল সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। পূর্ণাথীরা যাতে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারে তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো বিহার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুরো বিহারজুরে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। মেডিকেল টিম ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত থাকবে। সেই সাথে বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। যাতে বিহারে আসতে বা যেতে ধর্মাবলম্বীরা যাতে কোন বিঘ্ন  সৃষ্টি না হয় তার জন্য কাজ করবে। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার শাখার উপাসক-উপসিকা পরিষদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, কঠিন চীবর দানোৎসবের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিহার এলাকায় সাজ-সজ্জার কাজ শেষ। ৩ নভেম্বর থেকে সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হবে পুরো মন্দির এলাকা এবং ৪ নভেম্বর চিবর দানের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চিবর দানের পরিসমাপ্তি ঘটবে। বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রচলন হয় কঠিন চীবর দান। গৌতম বুদ্ধের তৎকালীন শীর্ষ বিশাখা দেওয়ান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে সে সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে কোমর তাঁতে চীবর বুনে তা গৌতম বুদ্ধকে দান করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। চীবর হচ্ছে ভিক্ষুদের পরিধেয় বিশেষ রঙিন কাপড়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরির কঠিন কাজটি সম্পাদন করতে হয় বলে একে কঠিন চীবর দান বলা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাস, কঠিন চীবর দান করতে পারলে ইহকাল ও পরকালে নির্বাণ তথা মুক্তি লাভ করা সম্ভব। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালন করে প্রাচীন নিয়মে। বৌদ্ধ ধর্মীয় শাস্ত্র মতে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী মহা উপাসিক বিশাখা কতৃর্ক প্রবর্তিত রীতি অনুসারে এই চীবর প্রস্তুত কষ্টদায়ক এবং কঠিন হলেও এই চীবর প্রস্তুত করে তা ভিক্ষু সংঘের হাতে তুলে দেয়া সকল দানের মধ্যে উত্তম দান এবং অধিক পূণ্যময় বিধায় এ দানকে দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান হিসবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply