Thursday , 25 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
দেশে ভূকম্পনের প্রধান উৎস সিলেটের ডাউকি ফল্ট

দেশে ভূকম্পনের প্রধান উৎস সিলেটের ডাউকি ফল্ট

অনলাইন ডেস্ক:

দেশে বিপজ্জনক ভূকম্পনের প্রধান উৎস হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার ডাউকি ফল্ট। গত ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে যে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে, তার উৎপত্তিস্থল ছিল ডাউকি ফল্ট। এটাই দুশ্চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টের পূর্ব প্রান্তে ৮.৭ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, কিন্তু ডাউকি ফল্টের পশ্চিম প্রান্তে ৪০০ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। এই প্রান্তে রয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থান। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একই এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে সিলেট অঞ্চলে আরেকটি ভূমিকম্প হয়। এগুলোও ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ফলে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। আর সিলেট থেকে খুব বেশি দূরে নয় রাজধানী ঢাকার অবস্থান। সেখানে যদি ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তাহলে এর বড় প্রভাব পড়বে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলেই।

জাতিসংঘের আর্থকোয়াক ডিজাস্টার রিস্ক ইনডেক্সেও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ২০টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ইরানের রাজধানী তেহরান রয়েছে শীর্ষে। ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়া ও তা মোকাবেলার প্রস্তুতি মিলিয়ে এই ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল, তথা হিমালয় বেল্টে অবস্থিত হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে ভূমিকম্প হয়ে আসছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সূচকে জনসংখ্যার ঘনত্ব, অধিক ভবন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো, শহরাঞ্চলে খোলা জায়গার অভাব ও সরু গলিপথ, লাইফলাইনগুলোর দুরবস্থা।

ভূমিকম্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তাঁর গবেষণা মডেল বলছে, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এই তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশে বিপজ্জনক ভূকম্পনের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাউকি ফল্ট এবং টেকনাফ-পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল সাবডাকশন জোন। আর্থ অবজারভেটরি ভূকম্পনগুলোর উৎপত্তিস্থল হিসেবে শনাক্ত করেছে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার লালাখালসংলগ্ন এলাকাকে, যেটা বিপজ্জনক ডাউকি ফল্টের পূর্ব প্রান্তের কাছাকাছি। তাই ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ডাউকি ফল্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে ৮.২ থেকে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। তবে এই ভূমিকম্প একবারেও হতে পারে, আবার ভেঙে ভেঙেও হতে পারে। কিন্তু আমরা দেখেছি, যে শক্তি সঞ্চয় থাকে তার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ একবারে বের হয়। এতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। আজ হোক আর কাল হোক এই শক্তি বের হবেই। আর ডাউকি ফল্টে ভূমিকম্প হলে এর বড় প্রভাব ঢাকায়ও পড়বে।’

এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস নেই। তবে জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে ঘরবাড়ি হয়েছে, তা ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক এলাকাই আছে যেখানে রাস্তাঘাট খুবই সরু। সেখানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনাও কষ্টকর। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের জনসচেতনতা নেই। সরকারেরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। তাই আমাদের এখনই মহড়ার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।’

ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট অঞ্চল ভৌগোলিকভাবেই ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত বড় কোনো ভূকম্পনের আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। গত কয়েক দিনের ছোট ছোট ভূমিকম্প দেখে আমাদের সে লক্ষণই মনে হয়েছে। ১৮৯৭ সালেও ডাউকি ফল্টই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। সেই ভূমিকম্পের পর এরই মধ্যে আবার শক্তি সঞ্চয় করেছে ডাউকি ফল্ট। এখন যেকোনো সময়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা জেলায় মোট ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে তিন লাখ এবং সিলেট জেলায় এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়ে বেশি। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো এবং এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply