নোয়াখালী প্রতিনিধি:
টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সকল মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, কৃষিতে ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করা, কৃষিতে জীবাষ্ম জ্বালানী নির্ভরতা কমাতে সৌরশক্তি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সরকারের কৃষি বিষয়ক পরিসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সরাসরি কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে দেশের খাদ্য সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। ‘সকল মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত কর, খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে সৌরকৃষিতে বিনিয়োগ কর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। নোয়াখালীতে মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা ও সৌরকৃষি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান, উপকুলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং একশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে উক্ত সভা আয়োজন করে।
আলোচনায় বক্তাগণ বলেন, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের খাদ্যের জোগান, পানির প্রাপ্যতা হুমকির সম্মুখীন। গত বছর সেচের পানির অভাবে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় সেচপানির সংকটের চিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষির প্রধান ও প্রাথমিক কাচাঁমাল হলো এই পানি। সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষকের পানির অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি জনঅর্থায়ন, কৃষি সেচ সমবায় সমিতি গঠন, স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ প্রদান এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিচক্ষণতার সাথে পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্বও আলোচনায় উঠে আসে। একইসাথে ফসলের উৎপাদন এবং সেচ ব্যবস্থাপনার সাথে সাথে কৃষককে বিদ্যুৎস্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সৌরকৃষি বা এগ্রোভল্টায়িক এর প্রচার এবং প্রসারের বিষয়টিও বক্তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
সৌরকৃষি বা এগ্রোভোল্টাইকস নামে পরিচিত একটি টেকসই উদ্ভাবনী কৃষি পদ্ধতি যা একই জমিতে সোলার প্যানেলের নীচে প্রচলিত কৃষি চাষ অব্যাহত রেখে সূর্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফসলের সাথে সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনও করতে সক্ষম। কৃষকরা সৌর শক্তিথেকে উৎপাদিত এই বিদ্যুত সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারে এবং বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আরও টেকসই রূপে উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখতে পারে বলে জানান বক্তারা। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নোয়াখালীর উপ-পরিচালক নুরুল আলম ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ) তানজিনা আক্তার, নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক শাহীদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাছান রুবেল, ড. মাসুদ কাইয়ুম, জেলা খেত-মজুর ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রমুখ।
প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার এবিএম ফজলুল হক বাদল।
আলোচনায় খাদ্য, পুষ্টি ও পানি সংকটে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর পক্ষে তাদের চাহিদা ও মতামত তুলে ধরেন স্থানীয় নারী ও পুরুষ কৃষকগণ। তারা বলেন, নোয়াখালীর সূবর্ণচরে সেচের পানি এবং খাবার পানি দু’ধরণের সংকটই বাড়ছে। বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হবার ফলে জলাধারগুলোয় পানি জমা হয়না। ফলে সেচের সংকট তৈরি হয়। আবার পানের জন্য ভূ-নিম্নস্থ পানি পেতেও নানা সংকটের কথা জানান তারা। সাম্প্রতিককালে ইটের ভাটা স্থাপনের ফলে পানির আধারসহ কৃষিজমি হ্রাস এবং পরিবেশগত ক্ষতির কথাও উঠে আসে।
আলোচনায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, কৃষক, কৃষিবিদ, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, উপকুলে জলবায়ু খাদ্য ও পানি সংকট নিয়ে কর্মরত অংশীভাগী অংশগ্রহণ করেন।