পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পের সকল সমস্যার সমাধান সচিবালয় বা অভিজাত হোটেলে নয়, কারখানায় বসে হতে হবে। গার্মেন্টসসহ নানা খাতের শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন করে কারখানাগুলোতে কাজের সুস্থ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এডাব্লিউএফএ) বাংলাদেশ আয়োজিত ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কমিশন শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি শিল্পখাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়।
তিনি আরো বলেন, একজন মালিক আক্রান্ত হলে সকল মালিক তার প্রতিবাদ জানান। শ্রমিকদেরও সেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল শ্রমিক সংগঠনকে এক প্লাটফর্সে আসতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের কতৃত্ববাদী সরকার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। শ্রম উপদেষ্টা দ্রুত সময়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুননির্ধারণের কার্যক্রম শুরু ও ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় শ্রমিকদের দুঃখ কষ্ট বিবেচনায় না নিয়ে বকেয়া বেতনের দাবির আন্দোলনে গুলি চালিয়ে তিনজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। অথচ পুঁজিবাদী শোষণ-বৈষম্যমূলক সমাজে দীর্ঘদিন যাবৎ সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার শ্রমজীবী মানুষেরা। তাই বৈষম্য নিরসনে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। এতে শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আংশিক পূরণ হবে। শিল্পে ও সমাজে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে।
বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, গার্মেন্টস শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের জন্য সরকার ও মালিকদের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় ও সেক্টরভিত্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা জরুরি। যৌথ দরকষাকষির সৃজনশীল পথ উন্মোচিত করে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্কের উন্নয়ন করতে হবে। কারখানার অভ্যন্তরসহ সমাজের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। মালিকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। অধিক মুনাফার লোভ ত্যাগ করতে হবে। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে ভীতি দূর করতে হবে। পরস্পরবিরোধী পক্ষ হওয়া সত্ত্বেও মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। পকেটস্থ ট্রেড ইউনিয়ন নয়, আদর্শভিত্তিক, দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক ট্রেড ইউনিয়ন করার সকল বাধা দূর করতে হবে।