Friday , 19 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, সরঞ্জাম পাওয়ার পথ খুলল

অনলাইন ডেস্ক:

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরদারে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ (আগ্রহপত্র) সই করার মধ্য দিয়ে সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বুধবার  জানান, কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়নি।

বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আগ্রহপত্র’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বিষয়ে।

গত মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহপত্র সই করার প্রসঙ্গও রয়েছে।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দ্বিপক্ষীয় অংশীদারির মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাত আরো জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশ আলোচনা ও সহযোগিতা, বিশেষ করে প্রশিক্ষণ সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘তারা প্রয়োজন ও উভয় পক্ষের সাড়া দেওয়ার সামর্থ্যের ভিত্তিতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম খাতে সহযোগিতা বাড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহপত্র সই করাকে উভয় পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের কাছে রাফাল যুদ্ধবিমান, বেসামরিক বিমান, রাডারসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়ে ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা বাহিনী ও বিমানবন্দরগুলো আরো আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় সামরিক ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রেতাদের জন্যও এ দেশ একটি সম্ভাবনাময় বাজার হয়ে উঠেছে। এসব কিছুর পটভূমিতে দীর্ঘ ২২ বছর পর বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্সে দ্বিপক্ষীয় সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবারের কর্মসূচিগুলোতেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেছেন এয়ারবাসের সিইও গুইলাম ফৌরি, ড্যাসল্ট এভিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এরিক ট্র্যাপিয়ার এবং থ্যালেসের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস কেইন। থ্যালেসের সঙ্গে গত মাসেই বাংলাদেশের রাডার ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এয়ারবাস ও ড্যাসল্ট এভিয়েশনের বিমান বিক্রির প্রস্তাব আছে বাংলাদেশের কাছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানান। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফরাসি বিনিয়োগ এখনো তার বৈশ্বিক বিনিয়োগের তুলনায় কম।’

সফরসূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে যান। অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ফেরান্ড প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।

এদিকে বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার ও নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে উভয় পক্ষই আশা করছে। উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কৌশলগত দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিত রাজনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে। দুই দেশই আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সবার সমৃদ্ধির জন্য একটি উন্মুক্ত, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের’ প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স।

আঞ্চলিক সহযোগিতার মতো বিষয়ও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ও শিল্প অংশীদারি জোরদারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রশ্নে তারা জাতিসংঘের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থান পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের ওপর চাপ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আঞ্চলিক সংকটের কথা উল্লেখ রয়েছে। সংকট সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বানও বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply