Friday , 13 June 2025
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
‘মব’কে সাপোর্ট দিয়েছেন সারজিস আলম, এটা ভয়ংকর কাজ : মাসুদ কামাল
--সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল

‘মব’কে সাপোর্ট দিয়েছেন সারজিস আলম, এটা ভয়ংকর কাজ : মাসুদ কামাল

অনলাইন ডেস্কঃ

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা ছিল আন্দোলনে সেটা তো আমরা দেখেছি। ওনাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কী ভূমিকা ছিল সেটাও আমরা দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে সারজিস আলমের কী ভূমিকা ছিল সেটা তো ফেসবুকে গেলে সবাই দেখে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ওনার সেই জ্বালাময়ী ভাষণ সেটাতো সবাই জানে।

হলের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে তার ছবি কে দেখেনি? সবই আমরা জানি। এখন উনি অথোরিটি হয়ে গেছেন? উনি তার কথার মাধ্যমে মবকে সাপোর্ট দিয়েছেন। মবকে সাপোর্ট দেওয়া ভয়ংকর একটা কাজ। সম্প্রতি ‘কথা’ নামে নিজের ফেসবুক পেজে তিনি এসব কথা বলেন।
 
মাসুদ কামাল বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আমরা দেখতে পেলাম। এতদিন মব ভায়োলেন্স ছিল একটি অপ্রতিরোধ্য ব্যাপার। কেউ সিদ্ধান্ত নিল মব তৈরি করবে, কোনো একটা বাড়ি, কোনো একটা স্থাপনা ভাঙচুর করবে, কাউকে পেটাবে, কাউকে অর্ধমৃত করে পুলিশে সোপর্দ করবে এগুলো ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কারো কাছে বিচার চাওয়া যেত না।
যে বিচার চাইতে যাবে তাকেই ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হতো যে স্বৈরাচারের দোসর; এবং এটা খুব সহজ কাজ ছিল। দুই-তিনজন ছেলে বলল— ওইখানে স্বৈরাচারের দোসর মিটিং করছে, গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো। আমরা বহুবার দেখেছি, ঢাকা শহরে, ঢাকার বাইরে দেখেছি। একনজরে বাড়ি লুটপাট করা, আগুন ধরিয়ে দেওয়া কোনো ব্যাপার ছিল না। বরং কেউ প্রতিরোধ করতে এলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতো।
এ এক ভয়ংকর অরাজকতা দেশজুড়ে চলছিল, চলতে দেওয়া হচ্ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেও এদের ধরার ব্যাপারে যে তোরজোড় তা লক্ষ্য করিনি বরং উল্টো দেখা গেছে এক ধরনের অসহায়ত্ব যে— ধরা যাচ্ছে না, কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই প্রথমবার আমরা দেখলাম রংপুরে যে মবের ব্যাপারে সেনাবাহিনী একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাড়িতে হামলা করা হয়। আচমকা হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়; ওখানে একটি মোটরসাইকেল ছিলো তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা ঘোষণা দিয়েই কিন্তু হয়েছে। তারা সেটা করবে, কেন জিএম কাদের রংপুরে আসবে তাকে আসতে দেওয়া হবে না; এটা কোন আইনে সেটা কেউ বলতে পারে না।

মাসুদ কামাল বলেন, এ ঘটনার একটি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেটা দেখে সেনাবাহিনী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে পায়রা চত্বরে ডেকে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ঘটনা শুনে রাত দেড়টার সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ঘটনাস্থলে যান। পরে তাদের ভিডিওর ছবি দেখিয়ে সেনাবাহিনী বলে, যারা এই কাজ করেছে তাদের ধরিয়ে দিতে আপনারা সহযোগিতা করেন।

তিনি আরো বলেন, এরপর মামলা করতে দুই পক্ষই থানায় গেলেও শুক্র ও শনিবার থানায় মামলা হয়নি। রবিবার দুই পক্ষের মামলাই নেওয়া হয়। রবিবার পুরো ঘটনা নিজের মতো বর্ণনা করে সারজিস আলম বিশাল একটা স্ট্যাটাস দিলেন। এবং সেই স্ট্যাটাসে তাদের কর্মকাণ্ডের সাফাই গাওয়া শুরু করলেন। উনি বললেন— জিএম কাদেরের বাড়ির পুরনো বাইক আর সামান্য আগুন নিয়ে যাদের এত চিন্তা তারা বিগত নয় মাসে আওয়ামী সন্ত্রাসী খুনিদেরকে ধরতে কয়টা অভিযান চালিয়েছেন? কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে?

তিনি বলেন, এই যে লেখাটা তিনি (সারজিস) লিখলেন এর মূল্য লক্ষ্যটা কে; সেনাবাহিনী। যেই সেনাবাহিনী ওই ঘটনার দায়ি ব্যক্তিদের ধরার জন্য ছবি দেখিয়ে তাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে এবং আগের রাতে সারজিস আলম যাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের উদ্দেশ্য করেই সারজিস আলমের এই লেখা। সেনাবাহিনী যে ওই লোকদের ধরতে চেয়েছেন এটা সারজিস আলমের পছন্দ হয়নি। উল্টো উনি বলছেন, জিএম কাদেরের বাড়িতে সামান্য আগুন। একটা বাইক কিন্তু পুড়ে গেছে, এইটা সামান্য আগুন মনে হয়েছে তার কাছে। সারজিস আলমের এই বক্তব্য খুবই আপত্তিকর মনে হয়েছে আমার কাছে। শেষ দিকে উনি (সারজিস আলম) বলেছেন— বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনো যথেষ্ট সম্মানের জায়গায় রাখি। মানে এরপর আর নাও রাখতে পারেন? কিন্তু ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও স্পষ্ট অবস্থান ও কার্যক্রম দেখতে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমি সারজিস আলমের এই কথার মধ্যে উদ্ধত দেখতে পাই। উনি নিজেদেরকে কি মনে করেন আমরা বুঝতে পারি না। উনি একটি পলিটিকাল পার্টির লিডার, উনি এই কথা বলতে পারেন কিনা? ফ্যাসিবাবিরোধী আন্দোলন উনি একা করেছেন? আর কেউ করেনি? এরা পুরো আন্দোলনকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করা শুরু করেছে। নিজেদেরকে অথোরিটি ভাবা শুরু করেছে। ওনারা বলতে চান— ওনারা যেটা বলবেন সেটাই আন্দোলন, বাদবাকি কেউ কিছু বোঝেন না। সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা ছিল আন্দোলনে সেটা তো আমরা দেখেছি। ওনাদের কী ভূমিকা ছিল সেটাও আমরা দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে সারজিস আলমের কী ভূমিকা ছিল সেটা তো ফেসবুকে গেলে সবাই দেখে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ওনার সেই জ্বালাময়ী ভাষণ সেটাতো সবাই জানে। হলের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে তার ছবি কে দেখেনি? সবই আমরা জানি। এখন উনি অথোরিটি হয়ে গেছেন? উনি তার কথার মাধ্যমে মবকে সাপোর্ট দিয়েছেন। মবকে সাপোর্ট দেওয়া ভয়ংকর একটা কাজ।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply