Thursday , 25 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

মহেশখালী থানায় ৪ পাহাড় খেকোর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
মহেশখালীতে দীর্ঘ দিন ধরে গোপনে রাত নামলেই শুরু হয় পাহাড় কাটা। এবিষয়ে মহেশখালীর কর্মরত সাংবাদিকরা অনেক বার পত্রিকায় রিপোর্ট করলেও কোন প্রকার অ্যাকশনে যায়নি উপজেলা প্রশাসন।কারণ এই পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রির জন্য সক্রিয় রয়েছে একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র। এই চক্রটি ম্যানেজ করে রেখেছে বন বিভাগ ও প্রশাসনের একটি অংশকে। এ  অবস্থায় পুলিশই পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বহনের কাজে নিয়োজিত ৫টি ড্রাম্পট্রাক আটক করেছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পাহাড়ের যে অংশ থেকে মাটি কেটে  চালান করা হয় ওখানে গিয়েই জীবন ঝুঁকি নিয়ে গভীর রাতে পুলিশ এ অভিযান চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একাধিকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) প্রনব চৌধুরী জানিয়েছে- পাহাড়খোকো চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান করছে। মহেশখালীতে কোন পাহাড় খেকোদের স্থান হবে না।
সূত্র জানিয়েছে- মহেশখালীর পৌর সদর, ছোট মহেশখালী ও হোয়ানক ইউনিয়ন ভিত্তিক একটি চক্র পাহাড় কেটে দীর্ঘ দিন থেকে মাটি বিক্রির ব্যবসা করে আসছিল। এ চক্রটি নিজেদের এই অবৈধ ব্যবসা বাঁধাহীন করতে বন বিভাগ ও প্রশাসনের একটি অংশকে ম্যানেজ করেই এই কাজ করে আসছিলো বলে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি পাহাড়খেকোদের এ অবস্থা বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে সূত্রে প্রকাশ। মূলতঃ দিনে প্রধান সড়কে মাটি ভর্তি ডাম্পট্রাক চালাতে গিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় শিশুসহ একাধিক ব্যক্তি নিহত হয় মহেশখালীতে। এ অবস্থায় দিনে মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক না চালিয়ে রাতে মাটি পরিবহনের জন্য একটি আদেশ প্রচার করেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ আদেশ পাওয়ার পর থেকে কৌশলে রাতে পাহাড় কেটে ডাম্পট্রাকযোগে মাটি পরিবহনের কাজে নেমে পড়ে এ পাহাড়খেকো চক্রটি৷
এদিকে এ অবস্থায় গত বেশ কয়েক দিন ধরে মহেশখালীর হোয়ানকের একটি পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় কাটার কাজে নেমে পড়ে একটি চক্র। এ চক্রটির মাথার উপর এলাকার প্রভাবশালীদের ছায়া রয়েছে বলেও সূত্রে প্রকাশ।
মহেশখালী থানা সূত্র জানিয়েছে- স্থানীয় ভাবে একাধিক পরিবেশপ্রেমি লোক বিষয়টি পুলিশকে অনবরত ভাবে জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ পাহাড় কাটার বিষয়ে নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্র নিয়োগ করে অভিযানের পরিকল্পনা নেন। মহেশখালী থানা পুলিশের তরফে এ সংক্রান্ত অভিযানের জন্য গঠনও করা হয় একটি বিশেষায়িত অভিযানিক দল।
এ অবস্থায় -গত শুক্রবার রাতের শুরুর দিকে মহেশখালী থানা পুলিশের কাছে খবর আসে হোয়ানক ইউনিয়নের পাহাড় সমৃদ্ধ এলাকা বরঘর পাড়ার কাছে একটি স্থানে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে পাহাড় কেটে ধারাবাহিক ভাবে ৬ থেকে ৭টি ডাম্পট্রাক এ মাটি অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। খবরটি পাওয়ার পরপরই মহেশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) প্রণব চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষায়িত দল পাহাড়ের ওই স্থানে অভিযানে পৌঁছান এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান শুরু করেন। এ অভিযান শেষ হয় ভোর রাত ৪টার দিকে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রণব চৌধুরী জানিয়েছেন- এ সময় পাহাড় কেটে মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত এক সাথে পাঁচটি ড্রাম্পট্রাক আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তবে এ অভিযান পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এমন অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা গেলো না কেনো? -জানতে চাইলে ওসি প্রনব চৌধুরী জানান- অভিযানের জায়গাটি প্রধান সড়ক থেকে পায়েহাঁটা পথে বেশ গভীরে, পাহাড়খোকো চক্র সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নিজেদের সোর্স ঠিক করে রেখেছে। পুলিশ পাহাড়ি গলির পথে মোড নিতেই খবরটি তাদের সোর্স মারফত পাহাড়খেকোরা জেনে যায়। ফলে পাহাড় কাটা ও মাটি পরিবহনের কাজে সংশ্লিষ্টরা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। যার ফলে হাতেনাতে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
মহেশখালী থানা সূত্র জানিয়েছে- হোয়ানকের জৈয়রকাটা এলাকার জনৈক সেলিম ওরফে সল্লু পাহাড় কেটে এই অবৈধ মাটি বিক্রির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এ ব্যবসার সাথে যুক্ত- ছোট মহেশখালীর জাহেদ সিকদার, মহেশখালী পৌর এলাকার স্বপন পাল ও মোহাম্মদ সারোয়ার। এ চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে পাহাড় কাটার সাথে জড়িত বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
ওসি জানিয়েছেন- অভিযানের সময় গাড়িগুলোর ড্রাইভার পালিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির ইঞ্জিন অনেকটা বিকল করে দিয়ে যায়। ফলে পরে মহেশখালী থানার পক্ষ থেকে ইঞ্জিন মিস্ত্রি ও ড্রাইভার নিয়ে গিয়ে ইঞ্জিন সচল করে ৫টি গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
ওসি প্রণব চৌধুরী জানান- গতকাল রাতে মহেশখালী থানার এসআই সজল কান্তি নাথ বাদি হয়ে পাহাড়খেকো চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন- ১৯৯৫ এর ১৫ এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন- ২০১০ এর ১৫ ধারায় এ মামলাটি করা হয়, মামলাটি তদন্ত করছেন- মহেশখালী থানার এসআই বাপ্পি সরদার।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জাহেদ সিকদারকে। জাহেদ ছোট মহেশখালীর দক্ষিণকুল এলাকার জনৈক মৃত শামসুল ইসলাম পুত্র। তিনি ছোট মহেশখালীর ইউপি চেয়ারম্যানের সহোদর বলে সূত্রে প্রকাশ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন যথাক্রমে মহেশখালী পৌর এলাকার মৃত সুভাষ পাল এর পুত্র স্বপন পাল, ছোট মহেশখালীর নলবিলা এলাকার জনৈক আবুল হাসেম প্রকাশ সুইন্ন্যার পুত্র মোহাম্মদ সারোয়ার ও হোয়ানক ইউনিয়নের পানিরছড়া জৈয়রকাটা এলাকার মৃত রশিদ আলীর পুত্র -সেলিম ওরফে সল্লু।
 নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে- মহেশখালীতে ধারাবাহিক ভাবে পাহাড় কাটা চললেও বন বিভাগ ও প্রশাসনের একটি অংশকে ভূমিদস্যু চক্র ম্যানেজ করে রাখায় পাহাড়খেকোরা নির্ভিগ্নে পাহাড় কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মাঝ থেকে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply