মৃত মানুষ নিয়ে এত ভয় কেন— প্রশ্ন রেখে সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, মরে যাওয়ার অধিকার এবং মৃত্যুর পর মানুষের স্বাভাবিক দাফন-কাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া জিনিসগুলো হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকে। সাহারার মরুভূমি থেকে শুরু করে আফ্রিকার জঙ্গলে, আমাজনের গহিন অরণ্য থেকে শুরু করে পৃথিবীর অসভ্যতম জনপদ যেখানে মানুষের মাংস মানুষ খায়; সেখানেও মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু হয়।’
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন খুব প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন নির্মল সেন। আপনারা যারা ৭০-৮০’র দশকে সংবাদপত্র পড়তেন, ওই সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে যাদের খোঁজখবর আছে কিংবা যারা বাংলাদেশের বাম ঘরানার রাজনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন; তারা জানেন যে বাংলাদেশে একসময় নির্মল সেন নামে একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, প্রখ্যাত কলামিস্ট ছিলেন।
তার একটা বিখ্যাত লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’; সারা বাংলাদেশে তখন এটা নিয়ে ভীষণ আলোচনা হয়েছিল।’‘কিংবা সেই যে বিখ্যাত ‘ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাবো’। বিভিন্ন সময় যারা ফ্যাসিজমের কথা বলেছে, স্বৈরাচারের কথা বলেছে; সেই সময়টিতে অনেক অনেক নির্মম ঘটনা ঘটেছে। সেই নির্মম ঘটনার বিরুদ্ধে মানুষ ক্রমাগত ফুঁসে উঠেছে, লড়াই করেছে, আন্দোলন করেছে এবং একটা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টির জন্য অথবা দুমুঠো ভাতের জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে, বন্দুকের সামনে আবু সাঈদের মতো করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রনি বলেন, ‘এসবের বিনিময়ে আমরা এখন কী পাচ্ছি? ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট মাস, এই এক বছর এবং তারপরে সেপ্টেম্বর মাস চলে গেল, অক্টোবর মাস চলছে। টোটাল ১৪ মাসে আমরা কি সাধারণ মৃত্যুর গ্যারান্টি পেয়েছি? কিংবা আমি মারা গেলে আমার পরিবার কান্না করতে পারবে, এ রকম কোনো গ্যারান্টি কি এই সমাজ, এই রাষ্ট্র, এই প্রশাসন এখন দিতে পারছে। কিংবা ধরুন আমার নবজাতক সন্তান হয়েছে, তাকে কেন্দ্র করে আমার পরিবার আনন্দ-উল্লাস করবে, এই গ্যারান্টি কি আছে?’
‘এই বাংলায় এমন কিছু ঘটছে, যা কখনো আমরা কল্পনা করিনি। আওয়ামী লীগ জমানাতে জামায়াতের ওপর অন্যায় হয়েছে, জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
তারপর সেই লাশ সুন্দরভাবে দাফন করা হবে, সেই দাফনকর্মে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতারা বাধা দিয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কত মানুষ হেনস্তার শিকার হয়েছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এগুলো সত্য।’‘নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার হয়েছে, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে।
আর এগুলোর বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করতে করতে আমরা যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছি, সেই বিজয়ের ফলাফল এখন যা কিছু হচ্ছে, তার সঙ্গে কি আওয়ামী লীগের জমানার কোনো কিছু তুলনা করা যাবে? যেমন ধরুন নুরুল মজিদ হুমায়ুন অত্যন্ত প্রবীণ একজন রাজনৈতিক নেতা। তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা হলো। তার হাতে হাতকড়া। তিনি বয়স্ক একজন মানুষ এবং তিনি যখন মারা গেলেন হয়তো যারা হাতকড়া পরিয়েছিলেন, তারা ভাবতে পারেননি বা তারা খেয়াল করতে পারেননি। যখন তার লাশ দাফন করতে নেওয়া হলো, তখন দেখা গেল তার হাতে সেই হাতকড়া রয়ে গেছে। এ রকম নির্মম ঘটনা আমি দেখিনি।’রনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী এরশাদ জমানা বা পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তাদের জমানা; এমনকি ব্রিটিশ আর্মিদের নিয়ে নানা কথা বলি; কিন্তু তারাও একজন মৃত মানুষের যে লাশ, তার প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করেছে, ওটা আমরা এই যুগে কল্পনা করতে পারি না।’