Thursday , 28 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মেসিকে পরানো আরবি পোশাকটি তৈরি করেছেন যিনি
--সংগৃহীত ছবি

মেসিকে পরানো আরবি পোশাকটি তৈরি করেছেন যিনি

অনলাইন ডেস্ক:

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছেন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। সোনালি ট্রফি তুলে দেওয়ার স্মরণীয় মুহূর্তে তাঁর গায়ে পরানো হয় আরব ঐতিহ্যের প্রতীক ‘বিশত’ নামের পোশাক। কাতারি দর্জি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-সালেমের তত্ত্বাবধানে পোশাকটি তৈরি করা হয়। ফ্রান্সের ফুটবল দলনেতা হুগো লরিসের জন্যও আরেকটি ‘বিশত’ তৈরি করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

ইসকুয়ার মিডল ইস্ট সূত্রে জানা যায়, ‘বিশত’ নামের এই পোশাকটি তৈরিতে খরচ হয়েছে দুই হাজার মার্কিন ডলার। জাপানি নাজাফি ফ্যাব্রিক দিয়ে হাতেই পোশাকটি তৈরি করা হয়। পোশাকের পুরো কাজটি শেষ করতে সাতটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। কাতারের স্থানীয় বাজারের এর মূল্য ৮ হাজার কাতারি রিয়াল।

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-সালেমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দ্য আল-সালেম স্টোর থেকে সাধারণত প্রতিদিন ৮-১০টি ‘বিশত’ পোশাক বিক্রি হয়। কিন্তু গত সোমবার অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফাইনালের পরদিন এই দোকান থেকে অত্যাধিক মূল্যের তিনটিসহ মোট ১৫০টি পোশাক বিক্রি হয়েছে। মূলত মেসিকে পোশাকটি পরানোর পর থেকে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

মেসিকে পরানো ‘বিশত’ পোশাকটির কারিগর মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-সালেম বলেন, ‘প্রথম দিকে যখন ‘বিশত’ পোশাকটি ডিজাইন করতে বলা হয়েছে তখনো আমাদের জানা ছিল না যে এটাই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়কে পরানো হবে। পরবর্তীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেসিকে আমাদের তৈরি ‘বিশত’ পরাতে দেখে খুবই অবাক হয়েছি। আমি খুবই গর্বিত যে বিশ্বকাপের তারকাকে পরানো ‘বিশত’ তৈরির জন্য আমাদের দোকানকে সংশ্লিষ্টরা বাছাই করেছেন।

তিনি আরো জানান, আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবং ফরাসি অধিনায়ক হুগো লরিস (১.৮৮ মিটার) উভয়ের জন্য দুই আকারের (ছোট ও দীর্ঘ) দুটি বিশত তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও আমাদেরকে তা খুবই হালকা করে তৈরি করতে বলা হয়। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, ‘বিশত’ পরার পরও যেন বিজয়ী দলের জার্সি যেন স্পষ্ট বোঝা যায়।

আল-সালেম দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক তৈরি করছেন। কাতারের স্থপতি শেখ খলিফার সময় থেকেই বিশত আল-সালেম আরববিশ্বে খুবই বিখ্যাত। তাই আমরা কাতারের বর্তমান রাজ পরিবারের জন্যও ‘বিশত’ তৈরির আস্থা অর্জন করি। আল থানি পরিবারের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদেরও আমাদের তৈরি এই পোশাক দেওয়া হয়।

পূর্বপুরুষদের কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল-সালেম বলেন, ‘আজ থেকে ৮০ বছর আগে আমার দাদা বিশত তৈরির পেশায় যুুক্ত হই। কাতারের সুক ওয়াকিফে আমাদের প্রথম শাখা খোলা হয়েছিল। দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা ও চাচারা এই পেশায় যুক্ত হন। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে এই পেশার বিকাশে আমরা অনেক উন্নয়ন মানের ‘বিশত’ তৈরির ব্যবস্থা করেছি।

‘বিশত’ (Bisht) বা ‘আবায়া’ আরব অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক যা উঁচু সম্মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন আরব ও মুসলিম দেশে বিশেষভাবে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোতে তা পরা হয়। এই অঞ্চলের রাজপরিবারের সদস্য, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তা পরে বিভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। তা ছাড়া কাউকে সর্বোচ্চ সম্মাননার অংশ হিসেবে তা পরিয়ে দেওয়ার প্রচলন রয়েছে।

ঢিলেঢালা লম্বা পোশাকটি সাধারণত কালো রঙের হয়ে থাকে। তবে এর সাদা, সোনালী, বাদামীসহ বিভিন্ন রঙ রয়েছে। সাধারণত তা নানা ধরনের উল থেকে তৈরি করা হয়। এর হাতা ও কলারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এমব্রয়ডারি, যার সেলাইয়ে রয়েছে খাঁটি সোনা ও রূপার প্রলেপ। উট বা লামার চুল বা ছাগল বা ভেড়ার উল ব্যবহার করে হাতেই তা সেলাই করা হয়। হস্তশিল্পের এই ধারা বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা। মূল্যবান উলের তারতম্যে পোশাকটির দামেও তারতম্য হয়ে থাকে।   এ ধরনের পোশাকের দাম প্রায় চার শত মার্কিন ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত।

সূত্র : অ্যারাবিয়ান বিজনেস ও ইসকুয়ার মিডল ইস্ট

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply