অনলাইন ডেস্কঃ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদকা রয়েছে, প্রতিদিন যাতে সূর্য উদিত হয়; দুজন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা, কাউকে সওয়ারিতে আরোহণ করতে সাহায্য করা বা তার ওপরে তার মালপত্র তুলে দেওয়াও সদকা, ভালো কথাও সদকা, সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি পদক্ষেপেও সদকা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদকা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) সুস্থ দেহকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তা লাভের কৃতজ্ঞতা হিসেবে সদকা বা দান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মানবদেহ আল্লাহর দান : সুস্থ ও স্বাভাবিক মানবদেহ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। মহান আল্লাহ বিস্ময়কর এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে মানবদেহ সৃষ্টির সেই বর্ণনা দিয়ে তিনি মানবজাতিকে তাঁর কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের বের করেছেন মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং তোমাকে সুসমঞ্জস করেছেন।’ (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ৬-৭)
শক্তি-সামর্থ্যের সঠিক ব্যবহারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা : আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবদেহের প্রতিটি জোড়াকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিপরীতে সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হাদিসে পরবর্তী বাক্যে সদকা বা দানের কিছু দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। হাদিসবিশারদরা এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মানুষের শক্তি ও সামর্থ্য তিন প্রকার। এক. চিন্তাশক্তি, দুই. বাচনিক শক্তি, তিন. শারীরিক শক্তি। মহানবী (সা.) মানুষের তিন প্রকার শক্তিরই ইতিবাচক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—তিনি সুবিচারকে মেধা ও চিন্তাশক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের দৃষ্টান্ত, ভালো কথাকে বাচনিক শক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের দৃষ্টান্ত এবং বোঝা বহনের মাধ্যমে শারীরিক শক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। একইভাবে মহানবী (সা.) উপকারী কাজ ও কষ্টকর বিষয় দূর করা—উভয় পদ্ধতিতে মানুষের কল্যাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।
অর্থদানই শুধু সদকা নয় : আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) দুজন মানুষের মধ্যে সুবিচার করা, প্রয়োজনের সময় অন্যকে সাহায্য করা, ভালো কথা ও ভালো আচরণ করা এবং মানুষের জন্য কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাকে সদকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যাতে প্রমাণিত হয়, শুধু অর্থ দান করাই সদকা বা দান নয়; বরং মানুষ সুপথে চলা ও পরোপকারের মাধ্যমেও সদকা বা দানের প্রতিদান লাভ করতে পারে। মানুষের জন্য কল্যাণকর যেকোনো কাজই সদকা হিসেবে গণ্য।
প্রকৃতার্থে মানুষ সারা জীবন চেষ্টা করলেও আল্লাহর অনুগ্রহের পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারবে না; বরং তার উচিত যেন তাঁর কৃতজ্ঞতার সর্বনিম্ন স্তরে উপনীত হওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।