Tuesday , 23 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
‘শঙ্কা সত্ত্বেও এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক’

‘শঙ্কা সত্ত্বেও এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক’

অনলাইন ডেস্ক:

দূরপাল্লার সড়কসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে তীব্র যানজট, ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয় এবং সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের আগাম আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এবারের ঈদযাত্রা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতাও ছিল যথেষ্ট ইতিবাচক। তবে আগাম নিষেধাজ্ঞা জারি করেও লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। লঞ্চের কেবিন, বাস ও ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি এবং বাড়তি বাসভাড়া আদায় বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদযাত্রা পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৬ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে স্বাক্ষরিত আরো বলা হয়, দূরপাল্লার সড়ক ও মহাসড়কে ক্ষুদ্র যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এবার অগণিত সংখ্যক মোটরসাইকেল বিনাবাধায় দূরপাল্লার যাত্রী বহন করেছে। এ কারণে গণপরিবহনে চাপ কিছুটা কমলেও ঈদযাত্রায় যেসব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে তার প্রায় অর্ধেকের জন্যই মোটরসাইকেল দায়ী।

নৌপথ তথা বেসরকারি লঞ্চসার্ভিসগুলো ঘরমুখী জনস্রোতের একটি বড় অংশের চাপ সামাল দিয়েছে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি করপোরেশন এবং এসব জেলাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর আনুমানিক ৪০ লাখ মানুষ ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে লঞ্চে বাড়ি গেছে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হওয়ায় কর্মজীবীরা ২১ এপ্রিল থেকেই সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বাড়ি পাঠাতে শুরু করেন। এ ছাড়া ঈদের দাপ্তরিক ছুটি ২ মে শুরু হলেও এর আগে ২৯-৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং পরের দিন রবিবার মে দিবসের সরকারি ছুটির কারণে এ তিনদিন নৌ, সড়ক ও রেলপথে মানুষের ঢল নামে। এর ফলে ঈদের আগের দিন সড়কে যাত্রীদের চাপ কম ছিল।

সড়কপথ : নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে তীব্র যানজটের বিড়ম্বনা ও দুর্ঘটনার আশংকা করা হয়েছিল। কিন্তু বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ, হাইওয়ে পুলিশ এবং বিভিন্ন স্থানের জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকায় শেষপর্যন্ত বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটেনি। তবে পদ্মার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজীরহাট এবং মেঘনার লক্ষীপুর-ভোলা নৌপথে ফেরিস্বল্পতার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখি জেলাগুলোর সড়কযাত্রীদের ফেরিঘাটে গাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের কারণে এসব নৌপথ ব্যবহারকারী কাটাপথের বাসযাত্রীদের এক থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক পায়ে হেঁটে গিয়ে লঞ্চে উঠতে হয়েছে।

নৌপথ : সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা নিকট অতীতের চেয়ে ভালো ছিল উল্লেখ করে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বাভাবিক সময়ে এখান থেকে প্রতিদিন ৮০-৮৫টি লঞ্চ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেলেও ঈদের চাপ সামাল দিতে লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে শতাধিক করা হয়। অর্থাৎ সদরঘাট থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক লঞ্চ যাতায়াত করেছে। তবে ঘরমুখি তীব্র জনস্রোতের কারণে ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত প্রায় সকল লঞ্চেই ছাদে যাত্রী তোলাসহ ধারণক্ষমতার ৪-৫ গুণ যাত্রী বহন করতে হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঈদের দিনসহ পরবর্তী দুই দিনও লঞ্চে ঘরমুখি যাত্রীর চাপ ছিল। এ তিনদিনে অন্তত ২০০ লঞ্চ যাত্রীবোঝাই করে সদরঘাট ছেড়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমান আদালত, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং লঞ্চ মালিকদের তৎপরতা এবং কঠোর নজরদারির কারণে নৌপথের বিভিন্ন টার্মিনাল ও ঘাটগুলোতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।

রেলপথ : এবার রেলপথও ছিল স্বস্তিদায়ক। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে একাধিক ট্রেনের সময়সূচি হেরফের হলেও তা ছিল সহনীয় মাত্রায়। তবে বরাবরের মতো এবারো ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন ঠেকাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অনলাইনে ও কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহে ভোগান্তি পুরোপুরি লাঘব করা সম্ভব হয়নি বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

টিকিট কালোবাজারি ও অতিরিক্ত ভাড়া

সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও জোর তৎপরতা সত্ত্বেও লঞ্চের কেবিন এবং ট্রেন ও বিলাসবহুল বাসসার্ভিসগুলোর টিকিট কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হয়েছে ঈদযাত্রীদের। নৌ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয় ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করলেও তা শতভাগ কাজে আসেনি। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা কেবিন প্রতি এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে দালালদের কাছ থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট কিনেছেন। তবে সদরঘাটে কোনো লঞ্চের কাউন্টার থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর একাধিক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির (পর্যটন ব্যবসায়ী) কাউন্টারে দূরপাল্লার বিলাসবহুল বাসের টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দূরত্ব ও গন্তব্য ভেদে জনপ্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হয়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া গাবতলীসহ বিভিন্ন আন্তজেলা বাস টার্মিনালের অনেক কাউন্টারেও জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

কালোবাজারি বন্ধ ও যাত্রী ভোগান্তি কমাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ টিকিটি অনলাইনে বিক্রি করলেও সার্ভার নষ্ট, ইন্টারনেট বিপর্যয় ইত্যাদি নানা অজুহাতে এই সেবা থেকে অসংখ্য মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রির কথা স্বীকার করায় এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন কাউন্টারে রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেয়ে বেশি টাকা দিয়ে দালালের কাছ থেকে টিকিট পেয়েছেন এমন ভূরি ভূরি অভিযোগও রয়েছে।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply