Thursday , 28 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
সাপ নিয়ে যত কুসংস্কার এবং আসল সত্য

সাপ নিয়ে যত কুসংস্কার এবং আসল সত্য

অনলাইন ডেস্কঃ

সাপ নিয়ে নানা ধরণের গল্প, আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভূত ধারণা, কুসংস্কার বা কিংবদন্তির যেরকম অভাব নেই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোয়, তেমনি সাপ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহেরও অভাব নেই এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

শুধু এই অঞ্চলই নয়, বিশ্বের যেকোনও অঞ্চলের বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এলাকা, আদিবাসী অধ্যূষিত অঞ্চল, পাহাড়ি জনপদ, নদী বা জলাশয়ের আশেপাশে থাকা জনবসতির মানুষের কাছে খুব পরিচিত প্রাণী সাপ। সরীসৃপ এই প্রাণীর কামড়ে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হলেও প্রাণী হিসেবে সাপ কিন্তু আগ্রাসী বা ভীতিকর প্রাণী নয়।

সাপ সাধারণত নিজে থেকে এগিয়ে এসে মানুষকে আক্রমণ করে না। হুমকির মুখে পড়লে, হঠাৎ চমকে গেলে বা কোণঠাসা হয়ে গেলে সাপ আক্রমণ করে থাকে।

সাধারণত গ্রামাঞ্চলে, কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায়, জঙ্গল বা পাহাড়ি অঞ্চলের জনবসতিতে সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

তবে যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের কৃষিপ্রধান গ্রামীণ সমাজের মানুষের সঙ্গে সাপের পরিচয় থাকলেও এখানকার মানুষের মধ্যে এখনও সাপকে কেন্দ্র করে নানা ভুল ধারণা বা কুসংস্কার কেন রয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

সাপ নিয়ে কেন নানা ধরণের ভুল ধারণা বিদ্যমান?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী মন্তব্য করেন এই অঞ্চলের ভৌগলিক পরিবেশের বিবেচনায় মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সাপের যুক্ততা থাকার কারণে ঐতিহ্যগতভাবে এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে সাপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তিনি বলেন, “গ্রামাঞ্চল, আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকা, জঙ্গলাকীর্ণ বা পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সাপের যুক্ততা শত শত বছর ধরে। এই যুক্ততার প্রতিফলন আমার লোকসাহিত্য, লোকবিশ্বাস, সংস্কার বা রীতিতে দেখতে পাই।”

“সাধারণ মানুষের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোই তো সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ফুটে ওঠে। সেভাবে জনজীবনের সাথে সাপের সম্পৃক্ততার কারণেই সাপ নিয়ে এত গল্প, কাহিনী রয়েছে।”

সাপ নিয়ে একইসাথে ভয় এবং কৌতুহল থাকার কারণেই সাপকেন্দ্রিক নানা ধরণের রীতি-রেওয়াজ, কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী।

“সাপ নিয়ে মানুষের একদিকে যেমন ভয় রয়েছে, তেমনি সেই ভয়কে অতিক্রম করারও বাসনা রয়েছে। এজন্যই আমরা সাপকেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার-প্রথা, পূজা, পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তিমূলক কাহিনী দেখতে পাই।”

“সারা বিশ্বের আদিবাসী বা ওই জাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরম্পরাগতভাবে এমন একটা প্রথা দেখা যায় যে, তারা যখন কোনও শক্তিকে ভয় পায়, তখন সেই শক্তিকে পূজা করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়।”

সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, “এই অঞ্চলেও সাপের দেবী হিসেবে মনসা দেবীকে পূজা করে সন্তুষ্ট করার একটা প্রথা ছিল – যেন মনসার বরে সাপ মানুষের কোনও অনিষ্ট বা অমঙ্গল করতে না পারে।”

“একদিকে সাপের ভয় এবং সেই ভয়কে অতিক্রম করার মনস্তাত্বিক আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে সাপকে কেন্দ্র করে চলে আসা নানারকম সামাজিক রীতি-রেওয়াজে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সাপ কেন্দ্রিক কাহিনীগুলোতে।”

সাপ নিয়ে যেসব ভুল ধারণা
সাপ নিয়ে নানারকম ভুল বা অবৈজ্ঞানিক ধারণা আমাদের লোকসমাজে প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল:

সাপ দুধ খায়
দুধ হজম করতে যেই উপাদানটি প্রয়োজন হয়, সাপের পাকস্থলিতে সাধারণত সেই উপাদানটিই কখনও তৈরি হয় না। অর্থাৎ সাপ কখনও দুধ হজমই করতে পারে না।

অনেক সাপের ক্ষেত্রেই দুধ বিষের মত কাজ করে। কিছু সাপ দুধ খাওয়ার সাথে সাথে মারাও যায়।

তবে সাপের খেলা দেখায় যারা, তাদের কাছে সাপ দুধ খাচ্ছে, এই দৃশ্য আপনি দেখেও থাকতে পারেন।

সাপকে দীর্ঘদিন পানি না পান করানোর পর যেকোনও ধরণের তরল পদার্থ পান করতে দিলে তারা সেটাই পান করে। সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণত এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সাপের খেলা দেখানো ব্যক্তিরা।

সঙ্গীকে হত্যা করলে সাপ প্রতিশোধ নেয়
সাপের সাধারণত কোনও ধরণের সামাজিক বা পারিবারিক বন্ধন থাকে না। এমনকি আলাদাভাবে কোনও হত্যাকারীকে চেনার মত স্মৃতিও থাকে না সাপের।

অর্থাৎ অন্য একটি সাপের মৃত্যুর গুরুত্ব একটি সাপ আলাদা করে বুঝতে পারে না।

আর মানুষ সাপের স্বাভাবিক খাদ্য না হওয়ায় মানুষকে হত্যা করার জন্য সাপ কখনও আলাদাভাবে আক্রমণ করে না।

সাপুড়ের বাঁশি বা বীণের শব্দে সাপ নাচে
সাপের খেলা দেখানো কোনও ব্যক্তির- যারা এই অঞ্চলে সাপুড়ে হিসেবে পরিচিত- হাতে থাকা লম্বা বাঁশি বা বীণের সুরের তালে তালে সাপ দেহ দোলাচ্ছে- এমন দৃশ্য বাংলা বা হিন্দি সিনেমার পাশাপাশি বাস্তব জীবনেও কেউ কেউ দেখে থাকতে পারেন।

তবে এখানে জেনে রাখা ভালো যে সাপটি কিন্তু বাঁশি বা বীণার সুর শুনে দেহ দোলাচ্ছিল না।

অনেক সময় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে, সাপ তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোনো বস্তুর নাড়াচাড়া অনুসরণ করে। তাই সাপুড়ের লম্বা বীণা বা বাঁশি সাপের খুব কাছে নাড়াচাড়া করা হলে সাপ ওই বস্তুটির নাড়াচাড়া অনুসরণ করতে থাকে।

আর দেহের বাইরে সাপের কান না থাকায় তারা খুব একটা ভালোভাবে শুনতে পায় না। কিন্তু মাটিতে হওয়া কম্পন খুব ভালো বুঝতে পারে।

সাপ নিয়ে নানা ধরণের গল্প, আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভূত ধারণা, কুসংস্কার বা কিংবদন্তির যেরকম অভাব নেই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোয়, তেমনি সাপ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহেরও অভাব নেই এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

শুধু এই অঞ্চলই নয়, বিশ্বের যেকোনও অঞ্চলের বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এলাকা, আদিবাসী অধ্যূষিত অঞ্চল, পাহাড়ি জনপদ, নদী বা জলাশয়ের আশেপাশে থাকা জনবসতির মানুষের কাছে খুব পরিচিত প্রাণী সাপ। সরীসৃপ এই প্রাণীর কামড়ে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হলেও প্রাণী হিসেবে সাপ কিন্তু আগ্রাসী বা ভীতিকর প্রাণী নয়।

সাপ সাধারণত নিজে থেকে এগিয়ে এসে মানুষকে আক্রমণ করে না। হুমকির মুখে পড়লে, হঠাৎ চমকে গেলে বা কোণঠাসা হয়ে গেলে সাপ আক্রমণ করে থাকে।

সাধারণত গ্রামাঞ্চলে, কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায়, জঙ্গল বা পাহাড়ি অঞ্চলের জনবসতিতে সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

সাপ নিয়ে একইসাথে ভয় এবং কৌতুহল থাকার কারণেই সাপকেন্দ্রিক নানা ধরণের রীতি-রেওয়াজ, কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী।

“সাপ নিয়ে মানুষের একদিকে যেমন ভয় রয়েছে, তেমনি সেই ভয়কে অতিক্রম করারও বাসনা রয়েছে। এজন্যই আমরা সাপকেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার-প্রথা, পূজা, পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তিমূলক কাহিনী দেখতে পাই।”

“সারা বিশ্বের আদিবাসী বা ওই জাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরম্পরাগতভাবে এমন একটা প্রথা দেখা যায় যে, তারা যখন কোনও শক্তিকে ভয় পায়, তখন সেই শক্তিকে পূজা করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়।”

সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, “এই অঞ্চলেও সাপের দেবী হিসেবে মনসা দেবীকে পূজা করে সন্তুষ্ট করার একটা প্রথা ছিল – যেন মনসার বরে সাপ মানুষের কোনও অনিষ্ট বা অমঙ্গল করতে না পারে।”

“একদিকে সাপের ভয় এবং সেই ভয়কে অতিক্রম করার মনস্তাত্বিক আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে সাপকে কেন্দ্র করে চলে আসা নানারকম সামাজিক রীতি-রেওয়াজে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সাপ কেন্দ্রিক কাহিনীগুলোতে।”

সাপ নিয়ে যেসব ভুল ধারণা
সাপ নিয়ে নানারকম ভুল বা অবৈজ্ঞানিক ধারণা আমাদের লোকসমাজে প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল:

সাপ দুধ খায়
দুধ হজম করতে যেই উপাদানটি প্রয়োজন হয়, সাপের পাকস্থলিতে সাধারণত সেই উপাদানটিই কখনও তৈরি হয় না। অর্থাৎ সাপ কখনও দুধ হজমই করতে পারে না।

অনেক সাপের ক্ষেত্রেই দুধ বিষের মত কাজ করে। কিছু সাপ দুধ খাওয়ার সাথে সাথে মারাও যায়।

তবে সাপের খেলা দেখায় যারা, তাদের কাছে সাপ দুধ খাচ্ছে, এই দৃশ্য আপনি দেখেও থাকতে পারেন।

সাপকে দীর্ঘদিন পানি না পান করানোর পর যেকোনও ধরণের তরল পদার্থ পান করতে দিলে তারা সেটাই পান করে। সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণত এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সাপের খেলা দেখানো ব্যক্তিরা।

সঙ্গীকে হত্যা করলে সাপ প্রতিশোধ নেয়
সাপের সাধারণত কোনও ধরণের সামাজিক বা পারিবারিক বন্ধন থাকে না। এমনকি আলাদাভাবে কোনও হত্যাকারীকে চেনার মত স্মৃতিও থাকে না সাপের।

অর্থাৎ অন্য একটি সাপের মৃত্যুর গুরুত্ব একটি সাপ আলাদা করে বুঝতে পারে না।

আর মানুষ সাপের স্বাভাবিক খাদ্য না হওয়ায় মানুষকে হত্যা করার জন্য সাপ কখনও আলাদাভাবে আক্রমণ করে না।

সাপুড়ের বাঁশি বা বীণের শব্দে সাপ নাচে
সাপের খেলা দেখানো কোনও ব্যক্তির- যারা এই অঞ্চলে সাপুড়ে হিসেবে পরিচিত- হাতে থাকা লম্বা বাঁশি বা বীণের সুরের তালে তালে সাপ দেহ দোলাচ্ছে- এমন দৃশ্য বাংলা বা হিন্দি সিনেমার পাশাপাশি বাস্তব জীবনেও কেউ কেউ দেখে থাকতে পারেন।

তবে এখানে জেনে রাখা ভালো যে সাপটি কিন্তু বাঁশি বা বীণার সুর শুনে দেহ দোলাচ্ছিল না।

অনেকসময় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে, সাপ তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোনো বস্তুর নাড়াচাড়া অনুসরণ করে। তাই সাপুড়ের লম্বা বীণা বা বাঁশি সাপের খুব কাছে নাড়াচাড়া করা হলে সাপ ওই বস্তুটির নাড়াচাড়া অনুসরণ করতে থাকে।

আর দেহের বাইরে সাপের কান না থাকায় তারা খুব একটা ভালোভাবে শুনতে পায় না। কিন্তু মাটিতে হওয়া কম্পন খুব ভালো বুঝতে পারে।

সাপুড়েরাও সাধারণত ওই মূলনীতি অনুসরণ করে সাপের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ক্রমাগত মাটিতে পা দিয়ে কম্পন তৈরি করতে থাকে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply