Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
হাফেজ, হওয়ার আশায় মাদ্রাসায় ভর্তি, ফিরল লাশ হয়ে 

হাফেজ, হওয়ার আশায় মাদ্রাসায় ভর্তি, ফিরল লাশ হয়ে 

পরিবারের সবার ছোট আর সবচেয়ে আদরের সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন মাদ্রাসায়; চার মাস না যেতেই সে কিনা ‘হাফেজ’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের বদলে ঘরে ফিরল লাশ হয়ে।
বাড়ি থেকে খুব দূরেও নয় মাদ্রাসাটি। প্রতিদিন বাড়ি থেকে সাত বছরের শিশু মাশফির জন্য খাবার নিয়ে যেত চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পরিবারটির কেউ না কেউ।
সেই মাদ্রাসা থেকে এমন খারাপ খবর আসবে তা এখনও ভাবতে পারছে না ওই পরিবারের কেউ।
শনিবার সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ দরবার শরীফ পরিচালিত আল্লামা শাহসূফী অছিয়র রহমান (ক.) মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয় কায়দা শাখার শিক্ষার্থী সাত বছরের ইফতেখার মালিকুল মাশফির গলাকাটা লাশ।
শিশুটিকে হত্যার পর লাশটি কম্বল মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল।
চরণদ্বীপ ইউনিয়নের মধ্যম চরণদ্বীপ ফকিরাখালি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে মাশফি। বাড়ির কয়েক কিলোমিটার দূরে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
মাশফির বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদ বলেন, “তারা তিন ভাইয়ের মধ্যে মাশফি ছিল সবার ছোট ও আদরের। দুই ভাই স্কুল-কলেজে পাঠ নিলেও বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল ছোট সন্তানকে হাফেজ বানানোর।
কিন্তু মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হিসেবে নয়, আমার ভাই বাড়ি ফিরছে লাশ হয়ে।”
ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে সেখানে ছুটে যান মাশফির বড় ভাই সদ্য এইচএসসি পাশ করা মাজেদ।
তার সন্দেহ মাদ্রাসা শিক্ষক কিংবা কারও ‘কুকীর্তি দেখে ফেলায়‘ ছোট ভাই মাশফিকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।
মাজেদ বলেন, “বয়স কম হলেও মাশফি ছিলেন খুব বুঝদার। নিজের কষ্ট কখনও প্রকাশ করতেন না। প্রথমে মাসে চার দিন তার ছুটি ছিল।
দ্রুত কোরআন শেষ করার জন্য তার ছুটি দুদিন করে দেওয়া হয়েছিল আমাদের ইচ্ছায়। তবে প্রতিদিন বিকালে আমি না হলে আমার মেজ ভাই বা পরিবারের অন্য কেউ তার জন্য খাবার নিয়ে যেত। নিজেরা বসে খাবার খাওয়ানোর পর নিজের ও সহপাঠীদের জন্য কিছু খাবার দিয়ে যেতাম, যাতে ক্ষুধা লাগলে সে খেতে পারে এবং তার সাথে কারও কোনো বিরোধ না হয়।”
নিচতলায় অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকলেও উপরের তলায় ব্যাগ রাখতো মাশফি। সেখানে খাবার রাখত বলে জানান তিনি।
মাজেদ বলেন, “মাদ্রাসা ছুটির পর বৃহস্পতিবার মাশফি বাড়ি গিয়েছিল। শুক্রবার বিকালে মামাত ভাইয়ের সাথে মাদ্রাসায় আসে। প্রতিবার বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় আসার সময় তার মন খারাপ হলেও তা প্রকাশ করত না।
“আমরা তাকে বলতাম, তুমি হাফেজ হয়ে বাবা-মাকে বেহেস্তে নিয়ে যাবে। সে কথা শোনার পর মনের কষ্ট ও চোখের পানি গোপন করে মাদ্রাসায় চলে আসত।”
মাজেদের দাবি, বিভিন্ন সময়ে তিনি ভাইকে মাদ্রাসায় দেখতে আসলে হুজুরদের শিক্ষার্থীদের বেধরক পেটাতে দেখতেন।
তবে তার ভাইকে মারতে দেখেননি বলে জানালেন।
তিনি বলেন, “সকালে হয়ত উপরে উঠে আমার ভাই কারো কোনো কুকর্ম দেখে ফেলেছিল। সেজন্যই তাকে খুন করা হয়েছে।”
মাজেদ বলেন, তাদের মা হৃদরোগের রোগী। গত ১২ জানুয়ারি একটি টিউমারও অপারেশন করা হয়েছিল।
“মাশফির মৃত্যুর খবর শুনে মাও কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। বাবা আবুধাবিতে সংবাদ শুনে কান্নাকাটি করছেন।‘হত্যা’ তদন্তে যেভাবে এগোচ্ছে পুলিশ
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে বলার মতো কিছু এখনও কিছু হয়নি।বোয়ালখালীর মাদ্রাসায় ছাত্রের গলাকাটা লাশ
“মাশফির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দাফনের পর তারা মামলা করবেন।”
‘কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে’ তদন্ত করার কথা জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তাদের মধ্যে একটি শিক্ষকদের বিষয়, অন্য দুইটির মধ্যে একটি মাদ্রাসায় কোনো ধরনের বিরোধে মাশফি বলি হয়েছে কি না।
আর একটি তাদের পরিবারের কোনো বিরোধে মাশফিকে খুন করা হয়েছে কি না।”
ঘটনাস্থলে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদ্রাসায় বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল।
শিক্ষার্থীরা বাইরে কোথাও গেলে তাদের শরীরে বেত্রাঘাতের চিহ্নও দেখা যেত। এ কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদ্রাসা থেকে ভর্তি বাতিল করে নিয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
বর্তমানে তিন শিক্ষকের মধ্যে জাফর ছাড়া অন্য দুইজনকে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রুস্তমকে কয়েক বছর আগে আর শাহাদাৎকে দুই মাস আগে একাডেমির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে মাজারের প্রধান খাদেম শেখ আবু মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফারুকীর দাবি, তাদের মাদ্রাসা কার্যক্রম নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ কারো ছিল না।এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply