দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত ২৬টি কূপ খনন করা হয়েছে। এসব কূপের মধ্যে বর্তমানে উৎপাদনরত ১২টি কূপ থেকে দৈনিক কমবেশি ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে সিলেটে আরো দুটি নতুন গ্যাস কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কূপ খননের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-১১ এবং রশিদপুর-১৩ যথাক্রমে দুই হাজার মিটার এবং চার হাজার মিটার গভীরতায় খনন করা হবে। কূপ দুটি খননের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট-১১ (উন্নয়ন কূপ) এবং রশিদপুর-১৩ (অনুসন্ধান কূপ) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। কূপ খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, গ্যাস পাওয়া গেলে প্রস্তাবিত কূপ দুটি থেকে দৈনিক প্রায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা আংশিকভাবে পূরণ করা। কূপ দুটি থেকে প্রথম পাঁচ বছরে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা। আলোচ্য কূপ দুটির গ্যাস বিদ্যুৎ, সার কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প-কলকারখানায় সরবরাহ করা হবে।
কূপগুলোতে গ্যাস পাওয়া গেলে ২০২৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশে চলমান গ্যাসসংকট মোকাবেলায় সরকার সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সিলেটের হরিপুর, ছাতক, কৈলাশটিলা, বিয়ানীবাজার ও রশিদপুরে ২৬টি গ্যাস কূপ খনন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আরো দুটি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিলেট-১১ উন্নয়ন কূপ ও রশিদপুর-১৩ অনুসন্ধান কূপ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। হরিপুর ও রশিদপুর ফিল্ডে আগের খননকৃত কূপগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় আলোচ্য কূপ দুটির লোকেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈদেশিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফলের ভিত্তিতে সিলেট-১১ নম্বর কূপ (উন্নয়ন কূপ) এবং রশিদপুর-১৩ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খননের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়াতে অন্তত ৮-১০টি প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-১১ নম্বর কূপটি হরিপুর প্রসেস প্লান্ট থেকে আনুমানিক ছয় কিলোমিটার দূরত্বে এবং নিকটবর্তী সিলেট-৩ ও সিলেট-৬ নম্বর কূপ থেকে যথাক্রমে এক কিলোমিটার এবং ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। হরিপুর ফিল্ডে বর্তমানে তিনটি উৎপাদনশীল কূপ (সিলেট-৭, ৮ ও ৯) থেকে দৈনিক কমবেশি ছয় মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে।
সিলেট (হরিপুর) ফিল্ড থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২৩.২৬ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সিলেট-১১ ও রশিদপুর-১৩ নম্বর কূপের খনন, কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মালামাল সংগ্রহ, তৃতীয়পক্ষীয় প্রকৌশল সেবা গ্রহণ, বৈদেশিক পরামর্শক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্য সম্পন্নকরণ।
এদিকে সম্প্রতি সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ খনন করে তেল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখান থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ১৫৯ লিটার তেলের প্রবাহ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই কূপের তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই মাস আগে এই কূপ খনন শুরু হয়।