Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২২: দৌড়ঝাঁপ শেষ; এবার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২২: দৌড়ঝাঁপ শেষ; এবার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

কুমিল্লা প্রতিনিধি:
আগামী ১৭ অক্টোবর সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন। তফসিল ঘোষনার পর (৪ থেকে ৮ সেপ্টম্বর) আওয়ামীলীগের দলীয় ফরম বিতরণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা থেকে একাধিক ব্যক্তির নাম শোনা গেলেও দলীয় ফরম নিয়েছেন ৮ জন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের, বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু, উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, দক্ষিণ জেলা আ’লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক, আলী আকবর, মহানগর আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: খোরশেদ আলম ও সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি কাজী আবুল বাশার।

দলীয় ফরম নেয়া ও আড়ালে অনেকেই প্রত্যাশী সভানেত্রী যাকেই মনোনীত করেন, তার হয়ে কাজ করবেন সবাই। স্বতন্ত্র বা দলের বাহিরে কেহ নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে জানান প্রার্থীরা। আজ ১০ সেপ্টেম্বর দলীয় মনোনয়ন বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই সিদ্ধান্ত হবে আজ। তাই প্রার্থীদের বিভিন্ন কেন্দ্রিয়নেতাদের সুপারিশ ও দৌড় তদবির নিয়ে ব্যস্ত একাধিক প্রার্থী। সবার নজর এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। কে হচ্ছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনীত।

সাধারণত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বয়স্ক বা দলের বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে অবদান রাখা ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করেন দলের সভানেত্রী। বিগত দিনে কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা অবদান ছিল অতুলনীয়। তারই অবদান হিসেবে আ’লীগের ক্ষমতা থাকা অবস্থায় টানা ১৪ বছরে মহানগর আ’লীগের সহ সভাপতি আলহ্বাজ ওমর ফারুক ও নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার এডমিরাল (অবঃ) আবু তাহেরকে  চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের দুই জনই চেয়ারম্যান হওয়ার পর কোন কর্মী বা তৃণমূলে বিশেষ কোন অবদান রাখেন নি। দল ক্ষমতা থাকলেও বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের কারনে জেলা পরিষদ ছিল গ্রুপিং নেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ওমর ফারুক ছিলেন আফজাল খান গ্রুপ আর আবু তাহের ছিলেন বাহার গ্রুপ। যার ফলে গ্রুপের বাহিরে গিয়ে উল্ল্যেখযোগ্য সাংগঠনিক কাজ করা কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের জন্য রয়েছে চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে তারুন্য ও তৃণমূল্যের প্রচন্দের প্রার্থীর বিকল্প নেই। বর্তমানে জননেতা হয়ে টেকসই উন্নয়নের চেয়ে ব্যাক্তিগত উন্নয়নের কারনে চারদিকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্য হচ্ছে, দেখা দিয়েছে দলের মধ্যে অন্ত:কোন্দল ও গ্রুপিং। যার ফলে আ’লীগ সরকার বিভিন্ন মূখী উন্নয়ন করলেও জনগণ তা স্বাচ্ছন্দে মেনে নিচ্ছে না। যতক্ষণ দলে গ্রুপিং না সরানো হবে, ততক্ষণ দলের মধ্যে তৈরী হবে ইমেজ সংকট।

দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করা  ৮ প্রার্থী : বর্তমানে জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবু তাহের। তিনি সদর সাংসদ বাহার গ্রুপের অনুসারী। তার নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করলেও জেলা জুড়ে গ্রুপিং থাকায় অনেক ভোট তার বিপক্ষে পড়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে  আ’লীগের দলীয় ৮ জন মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেও তাদের মধ্যে উত্তর জেলায় ১ জন ও দক্ষিণ জেলা আ’লীগের ২ জন। এদের ৮ জনের মধ্যে সদর উপজেলার এমপি বাহার সমর্থিত রয়েছে ৬ জন। ফলে সদরের প্রার্থীদের নিয়ে আবারো গ্রুপিংয়ের রেড সংক্ষেত।

বর্তমান চেয়ারম্যান  ক্লিন ইমেজের অধিকারি আবু তাহেরের বয়স বেড়েছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে বয়সটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন। এছাড়া বিগত ৫ বছরে সাংগঠনিকভাবে তেমন নেতাকর্মী সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি- এ কথাটি প্রচলন রয়েছে কুমিল্লায়।

আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার: তিনি উত্তর জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তাঁর ছেলে কিশোর মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ফলে একই ঘরে দুই জন জনপ্রতিনিধি করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ।

মোঃ আলী আকবর:   তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও  একজন বড় ব্যবসায়ি। অনেক ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। রাজনীতি ও ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবায়ও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে বেড়ে উঠা দির্ঘ রাজনীতির জীবনে কখনো মনোনয়ন চান নি। তবে এবার তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজেকে যোগ্য মনে করে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। পারিবারিক দিকে থেকেও আওয়ামী পরিবার হিসেবে জেলা জুড়ে খ্যাতিমান রয়েছে। অন্যান্য প্রার্থীর পরিবার ও অবস্থান দিক বিবেচনা করলে আলী আকবর সব দিক থেকে যোগ্য হিসেবে আলোচনায় ভাসছেন জেলা জুড়ে। কুমিল্লা জেলা ও মহানগরে বিভিন্ন গ্রুপিং থাকলেও তিনি কখনো গ্রুপিং রাজনীতিকে প্রচন্দ করেন না। একজন  ক্লিন ইমেজ ধারী ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে নেতাকর্মী এবং দলীয় সকল দপ্তরে তার রয়েছে বিশেষ সুনাম। তার নিজের কোন ধন সম্পদের চাহিদা বা টেন্ডারবাজির করার নজির নেই, তিনি টেন্ডারবাজী ও লুটপাটের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ।  জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে আলী আকবর ও একজন যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করেন জেলার তৃণমূল কর্মীরা। তাকে মনোনীত করলে আগামী দিনে কুমিল্লার আ’লীগের রাজনীতিতে সকল গ্রুপিং রাজনীতির অবসান ঘটবে আশাবাদী সর্বমহলে।

উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে আলহাজ্ব ওমর ফারুককে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় । পরে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার এডমিরাল অবঃ আবু তাহের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপনকে হারিয়ে বিজয়ী হন। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করে থাকেন।

 

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply