Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুষ্টিয়ার এক মাদ্রাসায় চলছে সভাপতি ও সুপারের নিয়োগ বাণিজ্যের মহোৎসব

কুষ্টিয়ার এক মাদ্রাসায় চলছে সভাপতি ও সুপারের নিয়োগ বাণিজ্যের মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া, টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া মাদ্রাসার গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎসহ অন্যের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমান। এর পর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষে নির্বাচন না দিয়ে দুই বার এডহক কমিটি পাস করিয়ে মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ সাবেক সভাপতিকে দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে সহযোগিতা করেন। এর পর সরকার স্কুল পরিচালনা কমিটিতে পর পর দুইবারের বেশি সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবে না এমন শর্ত দিলে মো. হামিদুর রহমান সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পর নির্বাচন না দিয়ে সাবেক সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে সভাপতি করে এডহক কমিটি পাস করিয়ে নিযে আসেন মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ।
 তাদের বিরেুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে সভাপতি মো. হামিদুর রহমান ও মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ যোগসাজস করে মৃত্তিকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। এছাড়াও স্কুলের বহু বছরের পুরাতন লক্ষাধিত টাকার গাছ বিক্রি করে সেই টাকা মাদ্রাসা ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও অন্যের জমি দখলকরে রাখারও অভিযোগ রয়েছে ওই মাদ্রাসার সভাপতি মো. হামিদুর রহমান ও মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদের বিরুদ্ধে। এসবের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করতে যান মাদ্রাসা সুপার তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জিডি করেন এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানী করার ভয় দেখান।
স্থানীয় বাসীন্দা রতন বলেন, মাদ্রাসা সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপার আমাদের পৈতিক সম্পত্তি জোড় করে দখল করে রেখেছে। আমরা আমাদের জায়গা জমি বুঝে নিতে চাচ্ছি তখন আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। মাদ্রাসার বড় বড় অনেক গাছ তারা বিক্রি করে দিয়েছে। যার দাম আনুমানিক কয়েক লাখ টাকা। আবার  স্থানীয় এক মহিলার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা একটা কম্পিউটার নিয়েও তারা ওই মহিলাকে চাকরিও দেয়নি টাকাও ফেরত দেয়নি। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা সুপার থানায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করেছে। আমরা এলাকাবাসী এই সুপার ও সভাপতির অপসারণ চাই।
স্থানীয় আরেক বাসীন্দা মুসা বলেন, যত রকম অনিয়ম সবিই এই মাদ্রাসায় আছে। এর আগে কয়েকজন ছেলে এসব অনিয়ম বিষয়ে মাদ্রাসা সুপারের কাছ জানতে চাইলে এবং এর প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসা সুপার ওইসব ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থানায় জিডি করেছে। মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতি অন্যের জমিও দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে আমাদেরও জমি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মো. হামিদুর রহমান। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না দিয়ে দুই বার এডহক কমিটি পাস করিয়ে মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ সাবেক সভাপতিকে দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে সহযোগিতা করেন। এর পর সরকার স্কুল পরিচালনা কমিটিতে পর পর দুইবারের বেশি সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবে না এমন নিয়ম করলে মো. হামিদুর রহমান সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পর নির্বাচন না দিয়ে সাবেক সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে পুতুল সভাপতি করে এডহক কমিটি পাস করিয়ে নিযে আসেন মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ। অন্য কাউকে তারা এখানে সভাপতি হিসাবে মানতেই পারেন না। আমরা এর একটা প্রতিকার চাই।
মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের জন্য সকলকে বেশ কয়েকবার ডেকেছি তারা কেউ উপস্থিত হয়না। এখন আমার প্রতিষ্ঠানতো চালাতে হবে। সে জন্য আমি এডহক কমিটি জমা দিয়েছি। পরে ওই এডহক কমিটি পাস হয়। এখানে দুই পক্ষ আঝে তাদের আমি একসাথে বসে সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি তাদের এক সাথে বসাতেই পারিনি। মাদ্রাসা সুপারের কাছে জানতে জানতে চাওয়া হয় আপনি কি সাবেক সভাপতি মো. হামিদুর রহমান পক্ষে কাজ করছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি কারো পক্ষে কাজ করছিনা। তবে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে হুমকী দিয়েছিলো তখন আমি সাবেক সভাপতি মো. হামিদুর রহমান মামার স্মরনাপন্ন হলে তিনি আমাকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন। তিনি আমার অভিভাবক। তিনিই আমার হত্তাকর্তা। আপনারা এখন যা বোঝেন বোঝেন।
সাবেক সভাপতি মো. হামিদুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। আমি ওই মাদ্রাস প্রতিষ্ঠা করেছি। মাদ্রাসার যত উন্নয়ন আমি করেছি। আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেড়াচ্ছে তারা এই প্রতিষ্ঠানের ভালো চায় না। জমি দখলের ব্যাপারে বলেন, এটা আমাদের মাদ্রাসার নিজস্ব জমি আমরা কারো জমি দখল করিনি। আর নিয়োগ দিয়ে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। আর এক মহিলার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা একটা কম্পিউটার নিয়েও চাকরি না দেওয়ার ব্যাপারে বলেন বোর্ড তাকে যোগ্য মনে করেনি তাই চাকরি দেয়নি এখানে আমাদের কিছু করার নাই। টাকা ফেরত না দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো সুদত্তর দিতে পারেননি।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply