Friday , 19 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন ঝর্ণা
--ফাইল ছবি

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন ঝর্ণা

অনলাইন ডেস্ক:

হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে ধর্ষণ আইনে মামলা করেছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাত আরা ঝর্ণা। গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় এই মামলা করেন তিনি।

গত ৩ এপ্রিল এই সোনারগাঁয় রয়াল রিসোর্টে ঝর্ণাসহ অবরুদ্ধ হয়েছিলেন মামুলুল। এ পরিস্থিতিতে ব্যাপক বিতর্কের মুখে ঝর্ণাকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর চুক্তিতে সাক্ষী রেখে বিয়ের দাবি করলেও আইনগত প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

এ ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ঝর্ণাকে উদ্ধারে ছেলে ও বাবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলে গত মঙ্গলবার পুলিশ তাঁকে মামুনুলের বোনের বাসা থেকে উদ্ধার করে। এরপর গতকাল মামলা দায়ের করে গণমাধ্যমের সামনে মামুনুলের বিচারও চান ঝর্ণা। তিনি বলেন, ‘আমার সর্বশেষ কথা, আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সঙ্গে অনেক বড় প্রতারণা করা হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গতকালই নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় ঝর্ণার। এরপর তিনি বড় ছেলে আব্দুর রহমানের সঙ্গে চলে গেছেন। আগামী রবিবার এ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগে মামলা হয়েছে।’

মামলার এজাহারে ঝর্ণা বলেছেন, ‘মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী নানা এলাকায় তাঁর পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাঁর যৌন লালসা চরিতার্থ করেন। বিয়ের কথা বললে করব-করছি বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।’

রিসোর্টকাণ্ড নিয়ে এজাহারে ঝর্ণা বলেন, ‘সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল ঘোরাঘুরির কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রয়াল রিসোর্টে নিয়ে আমার সঙ্গে তিনি শারীরিক সম্পর্ক করেন। সেখানে অবস্থানকালে স্থানীয় জনগণ আমাদের আকস্মিকভাবে আটক করে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় জনতার রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুলের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়।’

এজাহারে বলা হয়, ‘এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে মামুনুল আমাকে নর্থ সার্কুলার রোডের ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তাঁর পরিচিত একজনের বাসায় জোরপূর্বক আটকে রাখেন। এ সময় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এক পর্যায়ে কৌশলে আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুরবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারে আইনের আশ্রয় নিতে বলি।’

মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে ঝর্ণা বলেন, ‘আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে আমার পরিচয়। এর আগে আমাদের দাম্পত্যজীবন অত্যন্ত সুখের ছিল। স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তাঁর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। এর ফলে ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে তিনি কৌশলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। তাঁর কুমন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্যজীবন চরম বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপড়েনের মধ্যে মামুনুলের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট বিয়েবিচ্ছেদ হয়।’

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ‘বিচ্ছেদের পর আমি (ঝর্ণা) পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল আমাকে সহযোগিতার নামে ঢাকায় আসার জন্য প্ররোচিত করেন। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তাঁর সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর শুরুতে আমাকে তাঁর পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় রাখেন এবং নানাভাবে আকার-ইঙ্গিতে আমাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তাঁর প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর পরামর্শে আমি কলাবাগানের নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি এবং তাঁরই ঠিক করে দেওয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি।’

মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে রাজধানীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডবের পর রিসোর্টকাণ্ডে মামুনুলকে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে এখন তিনি দুই মামলায় আরো সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ঝর্ণা ছাড়া আরেক নারীকেও চুক্তিভিত্তিক বিয়ের দাবি করেন মামুনুল। তবে এসব বিয়ের আইনগত প্রমাণ বা নিকাহ নিবন্ধন নেই। ১১ এপ্রিল ঝর্ণার বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামি মাকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে পল্টন থানায় জিডি করেন। গত সোমবার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য কলাবাগান থানায় জিডি করেন ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমান। পরে মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরে মামুনুলের বোন দিলরুবার বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply