Saturday , 20 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মাল্টা চাষে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী কামাল

মাল্টা চাষে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী কামাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কামাল হোসেন  একজন কৃষক কুষ্টিয়া কুমারখালী নন্দলালপুর ইউনিয়নের চর এলঙ্গী গ্ৰামের মনসুর আলীর ছেলে  এই কামাল হোসেন। প্রবাসী মোঃ স্বপননের পরামর্শে  মাল্টার বাগান করার পরিকল্পনা করেন। তখন বিষয়টি  কেউই ভালোভাবে নেয়নি।
সৌদি প্রবাসী স্বপনের জমি নিজ নিয়ে ২০১৩ সালে ১০ শতক জমিতে ৫০টি মাল্টার গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান শুরু করেন।
তিন বছরেই তার মাল্টা বাগানে মাল্টা ধরতে শুরু করে, আজ সফল মাল্টাচাষি কামাল। বছরে তাঁর বাগান থেকে প্রায় ১ থেকে   দেড় লক্ষ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হয়। বাগানে হওয়া অন্যান্য ফল ও চারা বিক্রি করে তিনি আরও দুই লাখ টাকা পান।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলার অনেক এলাকার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। পরিকল্পিতভাবে এর চাষ করলে একদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটবে অন্যদিকে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
কামালের বাগানে মাল্টার পাশাপাশি  দেশি-বিদেশি আমগাছ লাগিয়েছেন। আরো আছে কমলা, আপেল ও লিচু, পিয়ারা, আখ।
 তবে মাল্টা চাষের ওপর তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন।  বাগানে বারি মাল্টা থাইল্যান্ডের বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রলিত মাল্টা জাতের গাছ আছে। চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। তিন বছর পর একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে।
 গাছপ্রতি মৌসুমে ৪৫০ থেকে ৫০০টি মাল্টা ধরে। বর্তমানে তাঁর বাগান পরিচর্যার জন্য চারজন লোক কাজ করেন। তাঁর দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টা বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
মাল্টা বাগানের শ্রমিক আলমগীর হোসেন জানান, তিন বছর ধরে মাল্টা বাগানে কাজ করছি। প্রতিদিন ৫ শ’টাকা হাজিরা পায়, মাল্টা বাগানে কাজ করে মাল্টা চাষ সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।   আমি নিজেও মাল্টা বাগান করতে চায়।
আর এক শ্রমিক মোঃ নয়ন হোসেন বলেন, মাল্টা চাষে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হাওয়া যায়।  মাল্টা বাগানে কাজ করে প্রতিদিন যে টাকা হাজিরা পায় এতে করে সংসারে অভাব দুর হচ্ছে। এই রকম আরো বেশি মাল্টা বাগান হলে আমাদের মত শ্রমিকরা কাজ করে খেতে পারবে।এক বার মাল্টা গাছ লাগালে অনেক বছর ফল পাওয়া যায়।
মাল্টা বাগান মালিক কামাল হোসেন বলেন, ৮ বছর গাছের বয়স। অভিজ্ঞতার অভাবে তিন বছর ধরে গাছে মাল্টা ধরছে। প্রথমে সাতক্ষীরা বর্ডার এলাকা থেকে বাড়ী ১’ মাল্টা গাছ এনে আমার বাগানে  রোপণ করি। কীটনাশক  তেমন লাগেনা।  বর্তমান   খুচরা বিক্রি করি ১ শ’ ২০ টাকা কেজি, পাইকারি ৯০ থেকে ১ শ’টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
 ১০ শতাংশ জমিতে মাল্টা প্রতি বছর ভালো ফলন হলে ৪০ থেকে ৪৫ মণ মাল্টা পাওয়া যায়। আমার মোট সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে , আম, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, আখ, কলা, আপেল, কোমলা চাষ করি। আমি মাল্টা বাগান আরো বাড়াতে চায়। এখন আমার বাগানে ৪ জন শ্রমিক কাজ করে। আমি মাল্টা বাগান বৃদ্ধি করবো এই জন্য জমি প্রস্তুত করছি। মাল্টা চাষে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হাওয়া যায়। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা পেলে মাল্টা চাষে আরো লাভবান হতাম।
কামাল হোসেনের  বাগানে নানা জাতের ফলের চারা রোপণ করে বড় হওয়ার পর তা বিক্রি করেন। তিনি নিজের বাগানে মাতৃগাছ থেকে বাকল দিয়ে ‘গ্রাফটিং’ করে চারা উৎপাদন করেন। এ বছর প্রায় দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তাঁর মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে পাশের কুমারখালী, খোকসা, কুষ্টিয়া শহরের ফলের বাজারে পৌঁছে গেছে। দূরদূরান্তের ফল ব্যবসায়ীরা তাঁর বাগানের মাল্টা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি ১ শ’ থেকে ১ শ’ বেশি টাকা দরে কেনেন ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামাল তাঁর মাল্টাবাগানে পাইকারদের কাছে মাল্টা বিক্রি করতে ব্যস্ত। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারেরা তাঁর বাগানের মাল্টা ওজন করে মেপে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে সিলেটের সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবন করেছে বারি মাল্টা-১ জাত।এটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ করা সম্ভব।কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আমদানি নয়, মাল্টা চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
রাইসুল ইসলাম কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার বলেন, মাল্টা একটি বিদেশী ফল, উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। আমরা ১ শ’ ২০ জনকে মাল্টা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই অঞ্চলে মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় অত্র জেলায় ফলটি খুব সম্ভাবনাময়। তাই গত কয়েক বছর যাবৎ উপজেলাতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল মাল্টা উৎপাদন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply