Wednesday , 24 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
যশোরের মনিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজের আগেই ভুয়া বিল!

যশোরের মনিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজের আগেই ভুয়া বিল!

যশোর : যশোরের মনিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামত ও সংস্কারে নামে সরকারের বরাদ্দ দেয়া কয়েক কোটি টাকা লোপাটের মহাআয়োজন চলছে। বরাদ্দ পাওয়া সিংহভাগ বিদ্যালয়ে মেরামত ও সংস্কারে নামে চলছে রং বদল। এছাড়া অস্থায়ী গৃহনির্মাণ, স্লিপ (বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা), প্রাক-প্রাথমিক, রুটিন সংস্কার, ওয়াশব্লকের বরাদ্দকৃত কয়েক কোটি টাকার কাজ নিয়েও বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে একই অবস্থা। আর এভাবেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা, প্রকৌশলী অফিস ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ পর্যন্ত এ টাকা ভাগবাটোয়ারার কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ভুয়া বিল ভাউচার দাখিলের মধ্যে দিয়ে টাকা উত্তোলন শুরু হয়েছে।
চলতি অর্থ বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী গৃহনির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার, স্লিপ প্রাক-প্রাথমিক, রুটিন সংস্কার, ওয়াশব্লকের বরাদ্দকৃত কয়েক কোটি টাকার কাজ সম্পন্নের শেষ সময় ছিল ৩১ আগস্ট। অথচ এখনও অনেক বিদ্যালয়ে কাজ শুরুই হয়নি। কাজ শেষ হওয়ার অনেক আগেই ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে বিল উত্তোলনের আবেদন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০) উপজেলার ২৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৫ টাকা, বরাদ্দ দেয়া হয়। অস্থায়ী গৃহনির্মাণে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, মেরামত ও সংস্কারে ৫৯টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ২ লাখ টাকা করে ১ কোটি ১৮ লাখ, ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে ১৭টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে দেড় লাখ টাকা করে ২৫ লাখ ৫০ হাজার, আম্পান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ১ লাখ টাকা করে ৬ লাখ, এনবিপিএ (নিড বেজড প্লেয়িং এক্সেসরিস) কাজের ৬টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে দেড় লাখ টাকা করে ৯ লাখ দেখা হয়। এছাড়া রুটিন সংস্কারে ২০২টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৪০ হাজার করে ৮০ লাখ ৮০ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ২৬৭টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ১০ হাজার করে ২৬ লাখ ৭০ হাজার, ওয়াশব্লকের ২৩টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ২০ হাজার করে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
সরেজমিন বিদ্যালয়গুলোতে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে। উপজেলার আটঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় মুক্তার আলী নামে একজন রঙের কাজ করছে। তিনি জানান, রং করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা চুক্তি করেছেন। এ সময় কত টাকার রং লাগতে পারে জানতে চাইলে মুক্তার আলী জানান, ৩৩ হাজার ৪শ’ টাকা খরচ হবে। ফজলুর রহমান নামে এক রাজমিস্ত্রি বিদ্যালয় ভবনের কিছু জায়গায় পলেস্তারার কাজ করেছেন। পরে পাশের গ্রামে মসজিদে কাজ করতে থাকা ফজলুর রহমানের কাছে গেলে তিনি জানান, প্রতিদিন ১২শ’ টাকা হাজিরায় ১১ দিন কাজ করেছেন। তিনি আরও জানান, এ কাজে ১৬ ব্যাগ সিমেন্ট ও দুই ট্রলি বালু লেগেছে। এ হিসেবে মেরামত ও সংস্কারে বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অফিসে বিলের জন্য আবেদন করা ভাউচারে শুধু শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৬৪ হাজার ৩৫০ টাকা, বালু, সিমেন্ট, চিপ খোয়া, খোয়া ও সিমেন্ট (৬০ ব্যাগ) বাবদ ৬৩ হাজার ৬শ’ টাকা, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, আলমারি মেরামত বাবদ ১৫ হাজার ৩০০ টাকা, রং বাবদ ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ বিদ্যালয়ের সিংহভাগ কাজই করা হয়নি। এ ধরনের ভাউচারের কথা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাপস চন্দ্র রায় বলেন, অফিসের পরামর্শে বিল ভাউচার জমা দেয়া হয়েছে।
ত্রিপুরাপুর বিদ্যালয়ে প্রায় ৬১ লাখ টাকা তিন তলা ভবনের কাজ শেষের পথে। একই স্কুলে মেরামত ও সংস্কারের জন্যও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে পাশের ভবনে। কিন্তু যেখানে ৬১ লাখ ব্যয়ে ভবন নির্মাণ শেষের পথে সেখানে ফের ২ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। বাগডোব-নওয়াপাড়া বিদ্যালয়ে কোনো কাজই হয়নি। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন বলেন, ভবনের অবস্থা ভালো না হওয়ায় কোনো রাজমিস্ত্রি ভবনে কাজ করতে চাইনি। এমন ভবন সংস্কারে কেন বরাদ্দ দেয়া হল এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, যদি না লাগে তাহলে সরকারি অর্থ অপচয় করা হবে না। কিন্তু কিভাবে বিল উত্তোলনে বিল ভাউচার জমা দেয়া হল এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন বলেন, অফিসের নির্দেশে করা হয়েছে। একইভাবে সৈয়দ মাহমুদপুর, পলাশি রাজবাড়ী, রাজবাড়ীয়া, এরেন্দা, স্মরণপুরসহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পুরনো রঙের (যা ভাল ছিল) পর নতুন করে রঙ করা হয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply