Thursday , 25 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে শশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ৯ মাসের গর্ভবতী তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ

ঝিনাদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরে স্ত্রীর দাবী নিয়ে শশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ৯ মাসের গর্ভবতী এক তরুনী (২২) কে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে ভিকটিমের ননদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ২ কিমি দূরে নির্জন স্থানে ভাসুর,চাচা শশুর সহ ৫ জনকে দিয়ে তাকে ধর্ষণ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

ভুক্তভোগি গর্ভবতী তরুনী এখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জানাগেছে,ঢাকার সাভারের একটি হাসপাতালে চাকরির সুবাদে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজীরবেড় ইউনিয়নের নতুন খোলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এরশাদ আলী শাকিলের সাথে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বাবা-মা হারা এতিম এই মেয়েকে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ৫ লাখ টাকার কাবিনে বিয়ে করে শাকিল। শাকিল একটি স্টিল কোম্পানিতে কর্মরত ছিল সাভারে।বিয়ের পর সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিল তারা। এর মধ্যে গর্ভবতী হয় এই তরুণী। শাকিলের বাড়িতে জানাজানি হলে তাকে মহেশপুর নিয়ে আসা হয়। এই মেয়েকে শাকিলের পরিবারের পছন্দ নয় বলে তারা তরুণীকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে গর্ভপাত করায় এবং তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগী তরুনীর বাড়ী মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার কামার গা গ্রামে। তার বাবা মৃত কাজী বাচ্চু মিয়া ২০১০ সালে ব্রেণ স্ট্রোক করে মারা যান এবং মা কুলসুম বেগম ২০০০ সালে মারা যান। ৬ ভাইবোনের মধ্যে ভুক্তভোগী ৫ নাম্বার। ছোটবেলা থেকেই জামালপুর পুলিশ লাইন্স পাড়ায় নানার বাড়িতে বসবাস করে আসছে। তার এক ভাই কলেজ শিক্ষক। প্রেম করে বিয়ে করায় বাড়ির কেউ খোজ রাখেনা তরুণীর।কিন্তু উনিশ সালের মে-জুন মাসের দিকে তার বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ঢাকা জজ কোর্টে শিশু ও নারী নির্যাতন মামলা করে ভুক্তভোগী।

এই মামলার পরে শাকিলের পরিবার মিমাংশা করার শর্তে আবার শাকিলের সাথে সংসার করাতে চায় ভুক্তভোগীর। আবার শাকিল ও সে সাভারে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। আবার গর্ভবতী হয় তরুণী। প্রেগনেন্সির বয়স ৫ মাস হলে তাকে বাসায় রেখে বাড়িতে চলে আসে শাকিল। স্বামীর খোজ করতে শশুর বাড়িতে আসলে শশুর বাড়ির লোকজন তাকে অস্বীকৃতি জানায়। স্বামী এখান থেকেও পালায়। প্রতিবেশি ও বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় ৪ মাস সে শশুর বাড়িতে থেকে স্ত্রীর অধিকার পেতে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এর মধ্যে শাকিলের পরিবার বাড়িতে অবৈধ দখল সহ বিভিন্ন অভিযোগে কোর্টে অন্তত ৪টি মামলা করে। ভুক্তভোগী বর্তমানে ৯ মাসের প্রেগনেন্সি নিয়েই স্ত্রীর অধিকার পেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা,মাতব্বর ও কোর্টের বারান্দায় ঘুরছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলায় তার হাজিরার তারিখ ছিল। ২২ তারিখ তার ননদ আরিফা বেগম স্বামী শাকিলের সাথে দেখা করানোর নাম করে তাকে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭ টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই চাচা শশুর আলী মোহাম্মদ নুরু,ভাশুর মুসা করিম সহ বেশ কয়েক জন অপেক্ষা করছিল বলে জানায় ভুক্তভোগী। এসময় তার উপর চড়াও হয়ে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এই আঘাতে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ৯ মাসের গর্ভবতী এই তরুণী। যখন মাঠ পাহারা দেয়া লোকজনের টর্স লাইটের আলো চোখে লেগে চেতনা ফিরে পান তখনও কেউ একজন তাকে ধর্ষণ করছে। মাঠ পাহারার লোকজনদের উপস্থিতিতে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। তারপর তাদের সহযোগিতায় তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় নতুন খোলা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। নতুন খোলা গ্রামে নিয়ে আসার পর পাড়াপ্রতিবেশি মহিলারা তার শরীরে অসংখ্য জায়গায় কামড়ের দাগ,আঘাতের চিহ্ন ও কামিজে রক্তের দাগ দেখে তাকে দ্রুত মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ২২ তারিখ রাত থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত এখানেই ভর্তি ছিল সে। তার পক্ষ নিয়ে থানা পুলিশে অভিযোগ করার লোক না থাকায় তার এই অভিযোগ আমলে নেয়নি মহেশপুর থানা পুলিশ।তার শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়নি।

২৫ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকলে ২৭ তারিখ রাতে এই ভিকটিমের খবর পাওয়া যায়। এর পর তার সাথে হাসপাতালে দেখা করতে গেলে সে এইভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেয়। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।

ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, এখন তিনি যোনী পথে প্রদাহ অনুভব করছেন। সারা গায়ে অসংখ্য স্থানে কামড় ও আচড়ের দাগ। তার প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। কিন্তু হাসপাতালের বেডে কিছু শুয়ে থেকে নিজের খাবার নিজেকেই কিনে এনে খেতে হচ্ছে এই তরুণীর। তিনি ধর্ষণের শিকার হওয়ার আগে স্ত্রীর অধিকার ও গর্ভে থাকা সন্তানের বাবার পরিচয়ের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও থানা পুলিশে বিভিন্ন সময় অভিযোগ দিলেও কোন ভাবেই শশুর বাড়ির লোকজন তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। উল্টো ভাশুর মুসা করিম বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছে ঝিনাইদহ কোর্টে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কোটচাদপুর-মহেশপুর সার্কেল অফিসার অতিরিক্ত এসপি মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, এই তরুণীর পূর্বের অভিযোগের বিষয়েও কিছুটা অবগত আছি। সে মূলত সংসার করতে চায় শাকিলের সাথে। যার কারণে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ধর্ষণের ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।

ঝিনাইদহ জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন বলেন,এটি অত্যান্ত অমানবিক একটি বিষয়। আমরা ভিকটিমকে সামগ্রীকভাবে সহযোগিতা করবো আইনি ভাবে যাতে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার আব্দুল আলিম জানান,আমি ভিকটিমের গায়ের বিভিন্ন চিহ্ন ও রক্তভেজা কাপড় দেখেছি। আমরা ঝিনাইদহ লিগ্যাল এইডে মামলার জন্য সুপারিশ করেছি। তার দ্রুত শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে কাজীরবেড় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি আমি জানিনা। তবে এই মেয়ের ব্যাপারে আগে বিভিন্ন শালিস করা হয়েছে কিন্তু মিমাংশা হয়নি।

এই দিকে ধর্ষণের পূর্বে মিমাংশার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বলেন, তোমার কারণে আমি আমার ভোট নষ্ট করতে পারবো না। সামনে ভোট। এমনই অভিযোগ তরুণীর।

এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকারী সংস্থা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঝিনাইদহ জেলা শাখার সেক্রেটারি জে এম রশীদুল আলম রশীদ জানান,ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত ঘটনার তদন্ত করা উচিত।ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় এনে সঠিক বিচার দাবি করছি।

এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঝিনাইদহ জেলা শাখাও। ঘটনার শিকার তরুণী জানায়, এখনও তলপেটে চাপ অনুভব করছি। কথা বলা হাটা চলা করা শক্তি নাই আমার।

এদিকে ৭ মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় ঝিনাইদহ জজ কোর্টের এক আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মোহন একটি ভুয়া কাবিন ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর উল্লেখ করে তালাকনামা পাঠিয়েছে মেয়েটির ঠিকানায়। কিন্তু গর্ভাবস্তায় তালাক কার্যকর হয়না বলে জানিয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিস।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply