Wednesday , 24 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
হাজার রাত অপেক্ষা মহিমান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’

হাজার রাত অপেক্ষা মহিমান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’

লাইলাতুল কদর মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য এত বড় উপঢৌকন যা কল্পনাতীত, অভাবনীয়, অচিন্তনীয়। পবিত্র কোরআনে এ রাত সম্পর্কে সূরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেস্তাগণ এবং জীবরাঈল আমিন তাদের প্রভুর আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। ফেরেস্তাগণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তির বাণী নিয়ে আগমন করেন।(সুরা কদর)

পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীর উম্মতগণ দীর্ঘ হায়াত পাওয়ার কারণে বেশি বেশি ইবাদত করতে পেরেছেন ‌কিন্তু শেষ নবীর উম্মতগণের স্বল্প হায়াত থাকার কারণে বেশি ইবাদত হতে বঞ্চিত হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক অনুগ্রহ করে এই রাতটি উম্মাতে মুহাম্মদিকে উপহার হিসেবে দিলেন। এ সম্পর্কে হযরত আনাছ (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, শবে কদর একমাত্র আমার উম্মতকে দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো উম্মতকে নয়। (মুসলিম) অন্য হাদিসে এসেছে-হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত লাইলাতুল কদরে জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি)

শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে শবে বরাত এবং ১০ মুহাররম আশুরার দিবসে অনুষ্ঠিত মর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে। কিন্তু লাইলাতুল কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাত নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে হযরত উবাইদা ইবনুস সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুল(সাঃ) আমাদের লাইলাতুল কদর বলে দেওয়ার জন্য ঘর হতে বের হলেন কিন্তু এসময় দু’জন মুসলমান প্রচন্ড ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল। অতঃপর নবী (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর বলে দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম কিন্তু দুঃখজনক অমুকে অমুকে প্রচন্ড ঝগড়াঝাঁটি করছিলো যে কারণে আমার স্মরণ থেকে তা তুলে নেয়া হয়েছে। তবে এটা আমাদের ভালোর জন্য হয়েছে বলে আমি মনে করি। তোমরা লাইলাতুল কদর রাত তালাশ করো রমযানের ২৯,২৭ এবং ২৫ তারিখে। (সহীহ বুখারী) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা ২৭ রমদ্বান রাতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমাদ) এ রাতটি নিদর্শন কেমন হবে এসম্পর্কে হযরত হাসান (রা.) বলেন, রাতটি হবে মোলায়েম এবং উজ্জ্বল,গরমও নয় ঠান্ডাও নয়। সকালের সূর্য উদিত হবে কিন্তু কিরণ থাকবে না। হযরত ওবাইদ ইবনে ওযাইর (র.) বলেন, আমি ২৭ রামাদানে সমুদ্রে ছিলাম। আমি সমুদ্রের পানি হাতে নিয়েছি পানি পেলাম মিষ্টি-কোমল।

কদরের মতো যেহেতু এত মর্যাদাপূর্ণ  রাত নেই তাই এ রাতকে সমাধিক গুরুত্ব দেয়া ঈমানদার ব্যক্তিদের দায়িত্ব। ভাগ্যবান তারা যারা এ রাতকে ইবাদতে মশগুল থাকে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন-হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি ভাগ্যক্রমে এ রাতকে পেয়ে যায়, তাহলে আমি কি দোয়া করব? তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, তুমি এ দোয়া কর,হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমতাধর, তুমি ক্ষমা করা পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সিদরাতুল মুনতাহার বিশেষ ফেরেস্তাগণকে দায়মুক্ত করে হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর নেতৃত্বে প্রেরণ করেন। তার নেতৃত্বে অসংখ্য ফেরেস্তাদের আগমন ঘটে এবং তারা দোয়া মুনাজাতে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলতে থাকেন। 

সর্বোপরি এমাস শুধু রোজা রাখার মধ্য সীমাবদ্ধ নয় বরং এই মাসের প্রতিটি মূহুর্ত ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবার এই মাসের শেষ দশকে রয়েছে এমন একটি রাত রয়েছে যে রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।  সিয়াম সাধনাসহ যতপ্রকারের ইবাদত করার চেষ্টা আমরা করেছি, তার ভুল-ত্রুটি থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে মহান আল্লাহর দরবারে কবুল করানোর আরজি পেশ করার এটিই একমাত্র রজনী।অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া ও জিকির-আসকার, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল,কবর জিয়ারতসহ অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারিতে থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।

আজিজুল ইসলাম রিয়াদ

সাংবাদিক ও কলামিস্ট

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply