Tuesday , 23 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিএনপি
--ফাইল ছবি

১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিএনপি

অনলাইন ডেস্কঃ

কেক কেঁটে ঘটা করে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসনের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এ বছর ১৫ আগস্টে কেক কাটার কোনো কর্মসূচি রাখা হচ্ছে না। তবে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এ বছরও মিলাদ মাহফিলের কর্মসূচি রাখা হতে পারে।

আগামী ১৫ আগস্ট শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠকও পিছিয়ে পরের দিন রবিবার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট শনিবারের বৈঠকে খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দলটির সিনিয়র নেতারা জানান দলীয় চেয়ারপারসনের জন্মদিনের বিষয়টি কখনো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। অঙ্গসংগঠন ও দলের অতি উৎসাহী কিছু নেতাকর্মী প্রতি বছরই নিজেদের উদ্যোগে কেক ও ফুলের তোড়া নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতার প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। তবে ২০১৫ সালের পরে এ ঘটনা আর ঘটেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার গতকাল বলেন, ‘ম্যাডামের জন্মদিন পালনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা এ ধরনের কেক কাটার অনুষ্ঠান আর চাইও না। তা ছাড়া তিনি তো এখনো পুরোপুরি কারামুক্ত নন। উনার স্বাস্থ্যগত অবস্থাও ভালো নয়।’

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ গতকাল জানান, ‘ম্যাডামের জন্মদিন পালনের কোনো নির্দেশনা মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া তিনি তো এক ধরনের আইসোলেশনে আছেন।’

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেছেন, ‘জন্মদিন পালনের নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া আমরা তো কেউ ম্যাডামের সঙ্গে এখন দেখা করতে পারছি না। ফলে জন্মদিনে ফিরোজায় জটলা করা সম্ভব হবে না।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণ দিবস ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হন। ফলে একই দিন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের ঘটনা নিয়ে বিএনপির বাইরে এমনকি ভেতরেও সমালোচনা রয়েছে। ১৯৯১-পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় অতি উৎসাহী একদল নেতাকর্মীর পরামর্শে ১৫ আগস্ট খালেদার জন্মদিন পালন শুরু হয়। পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি বা বাংলাদেশে এখনকার বিরাজমান রাজনৈতিক বিভাজন শুরুর এটিও একটি কারণ। তবে ২০১৭ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ রূপকল্পে খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। এ সময় দেওয়া বক্তৃতায় তিনি সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে সকল জনগণের ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ এবং নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছানোরও প্রতিশ্রুতি দেন।

সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ায় কারামুক্ত হয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় আছেন খালেদা জিয়া। মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগামী মাসে সরকারের কাছে তাঁকে আবেদন করতে হবে। চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে যেতে পারবেন কি না সেটিও নির্ভর করছে সরকারের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে খালেদার জন্মদিনকে কেন্দ্রে করে ১৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকতা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন দলটির বেশির ভাগ নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রভাবশালী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়াও রাজনৈতিক বৈরিতা দূর করতে বিএনপি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের ওই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, ফিরোজার সামনে গরু জবাই করে দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে দু-একজন নেতা ভাবলেও সেটির সম্ভাবনাও কম। এমন কর্মসূচিকেও মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে দলটির পক্ষ থেকে সর্বশেষ কেক কাটা হয়েছিল ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৬ সালে দেশব্যাপী বন্যা, গুম ও খুনের কারণ দেখিয়ে কেক কাটার কর্মসূচি বাতিল করা হয়। আর ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য ওই সময়টায় তিনি ছিলেন লন্ডনে। ওই বছরের ১৫ জুলাই থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থাকলেও সেখানে কেক কাটা হয়নি। ঢাকায়ও ওই দিন কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। যদিও লন্ডন বিএনপি অফিসে নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে কেক কেটেছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় কারাগারে যান খালেদা। ওই বছরের ১৫ আগস্ট কেক কাটার পরিবর্তে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিতর্ক এড়াতে খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মদিন পালন করার এক দিন পর ১৬ আগস্ট। ওই দিনও কেক কাটার পরিবর্তে তাঁর রোগ মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে দলটি দোয়া মাহফিল কর্মসূচি পালন করে। কারাবন্দি খালেদা জিয়া ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply