Saturday , 20 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলবেন ডিএসসিএসসির গ্র্যাজুয়েটরা-প্রধানমন্ত্রী

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলবেন ডিএসসিএসসির গ্র্যাজুয়েটরা-প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) গ্র্যাজুয়েটরা সেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসসিএসসির কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যাঁরা গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন তাঁরাই আমার সেই ২০৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। কাজেই, দেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং দেশের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সেদিকেই সকলকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি এবং এই দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের লক্ষ্য আরো অনেক দূর যাওয়া। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টায় আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি।

বর্তমান সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সমগ্র গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের উন্নয়নে শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ নামে এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়নও করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে, মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্টকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন শেখ হাসিনা। এদিন ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং ১০ জন নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের এক হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এই দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমর বিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে। তিনি বলেন, এটা মনে রাখতে হবে, পৃথিবীটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কোনো দেশ এককভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এ জন্য আমাদের জ্ঞানের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে সাম্প্রতিককালের বিশ্ব স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে এই সময় কোর্স সম্পন্ন করায় শিক্ষার্থী এবং ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা, ঝুঁকিসহ কভিড-১৯ মহামারির মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১ সালে পদার্পণ করেছি। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্থিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।

জাতির পিতার ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার তৎকালীন সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাস্তবে এটা আমরা করতে পেরেছি। আজকে আমাদের এই একাডেমি সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময় এবং সকলে এটা অনুভব করেন এবং এর প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’—এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ জন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি আগামী ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামই একেকটি শহরে রূপান্তরিত হবে। সেভাবেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। হয়তো চিরদিন থাকব না, কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply