নামের পাশে ইমো ‘সেলিব্রিটিং ঈদ।’ নিচে লেখা, ‘ঈদ মুবারক…সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।’
ঈদের আগের রাত ১২টা ৯ মিনিটে যখন ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিলেন, তখনো মুস্তাফিজুর রহমান জানতেন না, এবারের ঈদ মোটেও উপভোগ্য হবে না তাঁর জন্য। কল্পনাও করতে পারেননি, মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই কী বিষাদে ছেয়ে যাবে মন! ঈদের দিন সকাল পৌনে আটটার দিকে ঘটল দুর্ঘটনাটা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন মুস্তাফিজের চাচাতো ভাই মোতাহার হোসেন। শোকে-দুঃখে-কান্নায় ভেসে যাওয়া মুস্তাফিজ আর ঈদের নামাজই পড়তে গেলেন না। তাঁর ঈদ ঢেকে গেল শোকের চাদরে।
মোতাহার মুস্তাফিজের আপন চাচাতো ভাই ছিলেন না। আত্মীয়তার সম্পর্ক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। তবে সাতক্ষীরার তেঁতুলতলায় দুজনের বাড়ি পাশাপাশি। মোতাহার ছিলেন বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। বয়সে মুস্তাফিজ কিছুটা ছোট হলেও শৈশব-কৈশোর থেকে বেড়ে উঠেছেন মোতাহারের সঙ্গে। বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। ঈদের আগের দিনও মোতাহারকে নিজের গাড়িতে করে ঘুরিয়েছেন। এত কাছের কেউ যখন এ রকম আকস্মিক চলে যান, সেই কষ্ট বলে বোঝানো সম্ভব হয় না কারও পক্ষেই। হয়তো সে কারণেই কাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও ফেসবুকে তাঁর সর্বশেষ উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল ৭ জুলাই রাতের ওই স্ট্যাটাসটাই। জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড়ই পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের ছবি দিয়েছেন, মুস্তাফিজের ফেসবুকে কিছু নেই। সম্ভবত একই কারণে ধরলেন না ফোনটাও।
তবে বড় ভাই মাহফুজার রহমানের সঙ্গে কথা বলে মুস্তাফিজের মনের অবস্থার কিছুটা খোঁজ পাওয়া গেল, ‘মোতাহার আমাদের চিংড়ির ঘের দেখাশোনা করত। মুস্তাফিজ আর ও একসঙ্গে বড় হয়েছে। মুস্তাফিজের পক্ষে তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়াটা কঠিন।’
কঠিন, তবে মেনে না নিয়েই বা উপায় কী! শোকের ঈদ কাটিয়ে ‘কাটার মাস্টার’কে তাই আজই ধরতে হচ্ছে ঢাকার ফ্লাইট। আজ-কালের মধ্যে ভিসাপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ১২ বা ১৩ জুলাই ইংল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন। মুস্তাফিজ যাওয়ার পর ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে সাসেক্স তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ১৫ জুলাই, হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে। সাউথ গ্রুপে তারা এরপর খেলবে আরও তিনটি ম্যাচ। ইংলিশ কাউন্টির এই ক্লাবটির হয়ে মুস্তাফিজের খেলার কথা রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপেও। এই টুর্নামেন্টে মুস্তাফিজকে ছাড়াই চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে সাসেক্স। তবে মুস্তাফিজ যাওয়ার পরও গ্রুপ পর্বে ম্যাচ থাকার কথা আরও চারটি।
মুস্তাফিজের সাসেক্সে খেলতে যাওয়া নিয়ে কৌতূহল-আলোচনার কমতি ছিল না। আইপিএল থেকে ফিরেছিলেন হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলের চোট নিয়ে। সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক অবসাদ মিলিয়ে তাঁর ইংল্যান্ড যাওয়াটাই অনিশ্চিত মনে হচ্ছিল। সব বাধা টপকে মুস্তাফিজ এখন তৈরি। জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামের ভাষায়, ‘ওর ফিটনেসে আর কোনো সমস্যা নেই। সব ধরনের বলই করতে পারবে। তবে কিছু কাজ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিয়মিত করতে হবে।’
দেশে আপাতত ক্রিকেট নেই। নেই জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক কোনো ব্যস্ততা। মুস্তাফিজ ইংল্যান্ডে গেলে ইংলিশ কাউন্টিও তাই হয়ে যেতে পারে ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট।’