খোদ বাদীর বিরুদ্ধে ঘটনা চেপে যাওয়ার অভিযোগ দিলেন ভাই
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ঃ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লাহিনী মধ্যপাড়া এলাকার স্কুল ছাত্র আব্দুর রহমান রতন (১৬) হত্যা ঘটনার জট খুলতে পারেনি পুলিশ। এতে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে অপরাধীরা। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও খুনের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা রহস্য অনুসন্ধান করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বরং স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে এ হত্যা মামলায় তদন্তের নামে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিরীহ মানুষদের হয়রানী করেছে। একাধিক সুত্রে জানা গেছে, হত্যা নিয়ে এলাকায় সামাজিক আধিপত্য নিয়ে বিবাদমান দু’পক্ষের মধ্যে একে অপরকে ফাঁসানোর একটি চক্রান্ত এখনো অব্যাহত আছে। এমনকি এ মামলায় মাদক ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি পুলিসের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করছে।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার জট নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। গত মাসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার পাই। এদিকে সর্বশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন রতন হত্যাকান্ডের কোন কুলকিনারা খুঁজে পায়নি।
অন্যদিকে মামলার বাদী আজম সেখ ঘটনার প্রথম দিকে ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও বর্তমানে এই নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। খোদ আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগ সময়ের সাথে সাথে আজমের আচরনও রহস্যমূলক। তারা মনে করছেন ছেলে হত্যার ঘটনার অনেক কিছুই হয়তোবা তিনি জানেন। কিন্তু কোন প্ররোচনায় ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই নিয়ে বাদীর বড় ভাই আজিম সেখ নিজেই ভাতিজা হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ও মামলা সংক্রান্ত বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পিবিআই ও পত্রিকা অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে আজিম সেখ বাদীর বিরুদ্ধে হত্যা কান্ডের ঘটনা চেপে যাওয়ার অভিযোগ করেন। সেই সাথে নিকট আত্মীয় রাশেদ নামে এক যুবককের নাম উল্লেখ করেন। যিনি পুলিশের সোর্স হিসেবে এ মামলায় কাজ করেছেন। এমনকি রাশেদ ভুল তথ্যদিয়ে সাধারন জনগনকে হয়রানী করছে।
তিনি অভিযোগে আরো জানান, ভাতিজা হত্যাকান্ড নিয়ে মুখ খুলায় এ মামলায় তাকেও সন্দেহবশত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমনকি সামাজিকদ্বন্দে প্রতিপক্ষকে মামলায় আসামী করার জন্যও একটি পক্ষ চাপ প্রয়োগ করেছিল।
মামলার বাদী আজম সেখ জানান, আমি পুলিশকে সব রকম তথ্য দিয়েছি। স্থানীয় পাঁচটি বাড়ির নাম উল্লেখ করে তদন্ত করতে বলেছি। তাদেরকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ছেলে হত্যার মুল রহস্য বের হবে। এতদিন অতিবাহিত হলেও আমার ছেলের খুনি সনাক্ত হয়নি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তবে তার বিরুদ্ধে ঘটনা চেপে যাওয়ার আপন ভাইয়ের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি সকালে নিখোঁজের একদিন পর সদর উপজেলার লাহিনী মধ্যপাড়া এলাকার শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে স্কুল ছাত্র আব্দুর রহমান রতন (১৬) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রতন ঐ এলাকার টাইলস মিস্ত্রি আজম আলীর ছেলে। সে লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ বাদীর বড় ভাই আজম শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে মামলার হত্যা রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় গত মাসের ১৬ জুলাই পুলিশের হেডকোয়াটার্স থেকে মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ হস্তান্তর করে।
বর্তমানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই উপ পরিদর্শক মিকাইল বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। প্রকৃত ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বাদীর ভাইয়ের লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাক মারফত লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রয়োজনে তার জবানবন্দী নেয়া হবে।