কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় ধর্ষকের শারীরিক গঠনের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তা ধরে এই অপরাধীকে শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।
কয়েক ঘণ্টা পর চেতনা ফিরে পেয়ে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যান। রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরদিন ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা।
কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাস্থল থেকে সোমবার দুপুরে আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি।
ওই মামলায় বলা হয়েছে, ধর্ষক যুবকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা। স্বাস্থ্য মাঝারি। ঘটনার সময় তার চুল ছোট ছোট ছিল।“স্যান্ডেল পরা এই যুবকের পরণে পুরাতন জিন্সের প্যান্ট ছিল। গায়ে ময়লা কালো রংয়ের ফুলহাতা জ্যাকেট ছিল।”
ধর্ষণকারী যুবক, ছিলেন একাই: পুলিশ
ধর্ষকের শারীরিক বিবরণ তদন্তে সহায়ক হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই শারীরিক গঠনের যুবককে খুঁজে বের করতে কাজ চলছে। এরমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পেলেও পাশাপাশি থানা পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ফলে এককভাবে কেউ তদন্ত করছে না। বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। অপরাধীকে গ্রেপ্তার করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”উপ-কমিশনারসহ সুদীপসহ গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা মঙ্গলবার দুপুরেও দীর্ঘ সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান করে পুরো এলাকার একটি ম্যাপ তৈরি করেছেন।
ধর্ষক গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে: আইজিপি
মামলায় বলা হয়েছে, ওই ছাত্রী বাস থেকে নেমে আর্মি গলফ ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে ধর্ষক যুবক পেছন দিক থেকে তার গলা ধরে ফুটপাতের পাশে মাটিতে ফেলে দিয়ে গলা চেপে ধরে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করে। পরে জ্ঞান ফিরলে ওই ছাত্রীকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। এ সময় তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে।
“ধর্ষক পরে শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন, হাত ঘড়ি, একটি ব্যাগ, নগদ দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।”
কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কের এই স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই ছাত্রীর মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। তবে এরমধ্যে ফোন করলে রিং হয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তবে দূরবর্তী গলফ গার্ডেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ধর্ষককে দেখলে ‘চিনতে পারবে’ মেয়েটি
“এসব সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সন্দেহভাজন পথচারীদের শনাক্ত করা। কেউ ওই শিক্ষার্থীকে আগে থেকে অনুসরণ করেছিল কি না বা ঘটনার পরে ধর্ষক চলে যাওয়ার দৃশ্য ক্যমেরার ধরা পড়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা।”
কাউকে সন্দেহ হলে তার শারীরিক গঠন মামলায় দেওয়া বিবরণের সঙ্গে মেলানো হবে এবং পরে ওই শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে তার কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মাহবুব আলম বলেন, “ধর্ষক আশপাশের কোনো বস্তিবাসী, ছিনতাইকারী বা মাদকসেবী বলে আমরা ধারণা করছি।
“ঘটনাস্থলের এক কিলেমিটারের মধ্যে বসবাসকারী বস্তিবাসীর কেউ এই কাজ করে থাকতে পারে। আমরা এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে কাজ করছি।”
ঢাকা বিমানবন্দর সড়কের পাশে হলেও এই এলাকটি নিরিবিলি। এর আগে সেখানে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকলেও মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনার ঘটে থাকে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।