অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার (২০ জুন) সকাল ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন কামাল লোহানী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন কামাল লোহানী। গত মাসেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। শুক্রবার (১৯ জুন) জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ভাইরাসের সংক্রমণ ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের বরেণ্য এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।কলকাতার গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে ‘বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তরঙ্গ যোদ্ধা কামাল ভাই’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সত্তর দশকে কলকাতা তখন গণ আন্দোলনের কেন্দ্র। চলছিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনও। আর বাংলাদেশজুড়ে চলছিল পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে অকুতোভয় বাঙালি মুক্তিযোদ্ধার মরণপণ সংগ্রাম। শুধু কি মাঠ-ঘাট ধান-বেগুন খেতের আড়ালে লড়াই? না, এর পাশাপাশি ছিল আরো এক তরঙ্গ যুদ্ধ। পাকিস্তান রেডিওর বিরুদ্ধে আকাশবাণী কলকাতা ও স্বাধীন বাংলা বেতারের যৌথ লড়াই।
এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের বেতার তরঙ্গ যোদ্ধাদের অন্যতম এম আর আখতার মুকুল, ফয়েজ আহমেদ এবং কামাল লোহানী। পাকিস্তানবিরোধী প্রবাসী মুজিবনগর সরকার (অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার) তখন পরিচালিত হচ্ছে কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ৫৭/৮ এর বাড়ি থেকে। এই বাড়িতেই অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের কার্যালয়ের সংলগ্ন ঘরে বিশ্ব বেতার ইতিহাসের এক পর্ব রচিত হয়।
বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তথা বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের ঘটনাক্রম সম্প্রচারিত হতে থাকে। সংবাদ পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন কামাল লোহানী। সাধারণ কথায় কামাল ভাই। পুরো ১৯৭১-এর যুদ্ধ পর্ব, পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ-বাংলাদেশের জন্মের অনবদ্য ইতিহাস কেন্দ্র হয়েই থাকবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
কূটনৈতিক সবদিক বজায় রেখেই প্রথমে শিলিগুড়ি পরে কলকাতা থেকে বেতার কেন্দ্রটি পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই ইতিহাসের দুই প্রত্যক্ষ অংশীদার লেখক সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল ও কামাল লোহানী স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন, দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে অস্থায়ী সরকারের আলোচনায় রেডিও চালানোর অনুমতি প্রদানের বিষয়টি।
তিনি অনুমতি দিতেই অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মীরা এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে। পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতা করা ঢাকা বেতারের পলাতক কর্মী সাংবাদিকরা নেমে পড়েন রণাঙ্গনের তরঙ্গ যুদ্ধে। সম্প্রচারের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় মনোবল হারাতে থাকে পাকিস্তানি সেনারা। বাকিটা ইতিহাস- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ৯৯ হাজারের বেশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ, বাংলাদেশের জন্ম।
Home » দৈনিক সকালবেলা » পাচঁফোড়ন » ‘বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তরঙ্গ যোদ্ধা কামাল ভাই’