Saturday , 20 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
নির্বাচনে আসতে সব দলকে আহ্বান জানিয়ে যাবে ইসি

নির্বাচনে আসতে সব দলকে আহ্বান জানিয়ে যাবে ইসি

অনলাইন ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সব দলকে শেষ পর্যন্ত আহ্বান জানিয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে সামর্থ্য সাপেক্ষে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইসি নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব যৌক্তিক মনে করছে। এ ছাড়া কমিশন জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র  ও প্রতিরক্ষা  kalerkanthoমন্ত্রণালয়কে তাদের অধীনে ন্যস্ত করার বিষয়টি সংবিধানের আলোকে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে। ইউটিলিটি বিল বাকি থাকার কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হওয়ার বিদ্যমান বিধান ‘যৌক্তিক করার’ বিষয়টি কমিশন বিবেচনা করবে। একাধিক দিনে এ নির্বাচন করা যায় কি না, সে বিষয়ে কমিশন আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার আশা রাখে।

গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে এসব  মতামত দিয়েছে।  কমিশনের ওই সংলাপ রাজপথের প্রধান বিরোধী দলসহ ৯টি দল বর্জন করে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সই করা এই মতামত গতকাল সোমবার কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিচালক-জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছে কমিশনের এই পর্যালোচনা ও মতামত গতকালই  পাঠানো হয়েছে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে বা প্রধানতম সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে—বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের এই দাবির বিষয়ে কমিশনের  অভিমত, কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াসও ইসি গ্রহণ করবে না। তবে সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান শেষ অবধি আন্তরিকভাবেই বজায় রাখবে।

সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব ও দাবি ছিল, নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থশক্তি ব্যবহার এবং প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে, রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বা তাঁদের পাশাপাশি যত দূর সম্ভব কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

এ প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। এ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক প্রশ্নে মতৈক্যে উপনীত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখতে হবে।

ইভিএম : ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের অভিমত, ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও সমর্থন দুই-ই রয়েছে। কমিশন ইভিএমের সার্বিক বিষয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও এর আগে ইভিএম নিয়ে আরো যেসব কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে কমিশন ভিন্নভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সেই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে অবহিত করা হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার : সংলাপে বেশির ভাগ দলের নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নির্বাচনের আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের সময় কমিশনের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে কমিশনের মত, বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে ইসির অধীনে ন্যস্ত করার বিষয়টিও সংবিধানের আলোকে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন।

সভা-সমাবেশে বাধা ও গায়েবি মামলা : সংলাপে কয়েকটি দলের অভিযোগ ছিল, নির্বাচনের সময় তাদের কর্মী ও সমর্থকদের বাধা দেওয়া হয়, ‘সরকারি দলের মদদে’ গায়েবি মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে  কমিশনের বক্তব্য, কমিশন দৃঢ়ভাবে আরো বিশ্বাস করতে চায় যে সরকারি দল এ ধরনের নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গজনিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলা করে সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার পথ রুদ্ধ করবে না। নির্বাচনের সময় সব অংশীজনের কার্যকলাপ কমিশন গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবে।

সংবাদকর্মী ও পর্যবেক্ষক : অনেক দলের প্রস্তাব সমর্থন করে ভোটগ্রহণ চলাকালে ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সংবাদকর্মী এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে কমিশন বলেছে, দেশি ও বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। সামর্থ্য সাপেক্ষে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে অভ্যন্তরের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া  হবে।

একই মঞ্চে সবার বক্তব্য : একই মঞ্চ থেকে সব দলের প্রার্থীদের বক্তব্য দেওয়া, নির্ধারিত স্থানে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে কয়েকটি দলের প্রস্তাবকে আধুনিক উল্লেখ করে কমিশনের অভিমত, এতে নির্বাচনী ব্যয় কমে আসতে পারে। নির্বাচনী সহিংসতা হ্রাস পেতে পারে।

অন্যান্য প্রস্তাবে অভিমত : ইসি কয়েকটি দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন,  দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো এবং নারী আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব বিষয়ে বলেছে, এগুলো দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার ও সংসদের এখতিয়ারাধীন।

একাধিক দিনে নির্বাচন ও সেনা মোতায়েন : সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে করার এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে প্রস্তাব সম্পর্কে কমিশন বলেছে, একাধিক দিনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের গোপনীয়তা রক্ষা হবে কি না, হলে তা কিভাবে সম্ভব হবে, দিনের ফলাফল দিনে প্রকাশ করা হবে কি না, হলে তা পরবর্তী নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি না—এসব নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। দেশে একই দিনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয় বলে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কাজে নিয়োজিত অসামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা অপর্যাপ্ত বা অপ্রতুল হতে পারে। এ কারণে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবটি যৌক্তিক।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply