Wednesday , 24 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

বরিশালে বেড়েছে তালাকের সংখ্যা 

বরিশাল অফিস : বরিশাল নগরীতে পারিবারিক কলহ বাড়ছে। আর এ কলহ রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। এরপর ঘটছে বিচ্ছেদের মতো ঘটনা। বিশেষ করে গেলো অতিমারি পরিস্থিতির সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা কিছুটা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বরিশাল সিটি এলাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৬৪৫টি। যার মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক ৩৪৫টি এবং স্বামী কর্তৃক তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৩০০টি। পারিবারিক কলোহ, পরকীয়া আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধের কারণেই অধিকাংশ তালাক বা সংসার ভাঙছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল। আর এই বিচ্ছেদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্ত জীবনে জন্ম নেয়া সন্তানেরা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তালাক রেজিস্ট্রি ডেস্ক থেকে জানা গেছে, ‘চলতি বছরের গত ৫ মাসে বরিশাল নগরীতে মোট ১১৭টি তালাকের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক তালাক হয়েছে ৫৪টি। এর আগে ২০২১ সালে এক বছরে ২৯৫টি তালাক হয়েছে। যার মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক ২৪৪টি এবং বাকি ৫১টি হয়েছে পুরুষ কর্তৃক। তাছাড়া ২০২০ সালে তালাকের ঘটনা ঘটেছে ২৩৩টি। এর মধ্যে ২০৫টি স্ত্রী এবং ২৮টি তালাক হয়েছে স্বামী কর্তৃক। বাৎসরিক হিসেবে তালাকে নারীরা এগিয়ে থাকলেও গর হিসেবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সমান সমান। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘তালাকের দিক থেকে নারীর থেকে পুরুষরা এগিয়ে বেশি। মূলতঃ নারী কর্তৃক তালাক হলে দেনমোহরের টাকা পরিষদ করতে হবে না বিধায় নারী কর্তৃক তালাক দেয়া হচ্ছে। এর ফলে তালাকের দিক থেকে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারির পূর্বের থেকে করোনা পরবর্তী ২০২০ সালের পরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা ঘটেছে পারিবারিক কলোহ থেকে। এমনটিই জানিয়েছেন তালাক দেয়া কয়েকজন নারী-পুরুষ। ২০২২ সালে নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া এলাকায় স্বামীকে তালাক দিয়েছেন এক নারী। আলাপকালে এই নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০১৮ সালে মাইনমুল নামের একজনের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্ত জীবন বেশ ভালই কাটছিল। কিন্তু ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। যা শেষ পর্যন্ত তালাক পর্যন্ত গড়িয়েছে। বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা হাসান। তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন ২০২১ সালে। শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে স্ত্রীর মতবিরোধ থেকে নিয়মিত ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়া থেকে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে কলোহ এবং পরবর্তীতে তা তালাক পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি স্ত্রী ফেসবুক আসক্ত ছিলেন। ফেসবুকে পরকীয়ার সম্পৃক্ততাও পেয়েছেন। এসব কারণেই শেষ পর্যন্ত তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাছাড়া কাউনিয়া এলাকার শান্তা আক্তার নামের একজন নারী চলতি বছরের শুরুতে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী নাসিরকে। বর্তমান তালাক দেয়া স্বামীর ঘরেই ফিরে যেতে চাচ্ছেন তিনি। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে সালিশ মিমাংসা চলছে। তবে কি কারণে তালাকের সিদ্ধান্ত নিলেন সেই বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ ওই নারী। তাছাড়া বাকেরগঞ্জের দুধাল গ্রামের আনিসুর রহমান তালাক দিয়েছেন তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমাকে। তবে তালাকের বিষয়টি আদালতে বিচারাধিন থাকায় এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি আনিসুর রহমান। এদিকে, সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে যেসব তালাকের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে তিনজনের বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ তারা তালাক পরবর্তী পুনরায় সংসার করছেন। স্থানীয় সালিশ মিমাংসার মাধ্যমে তাদের সংসারে জোড়া লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৫ মে চরমোনাই ইউনিয়নের মেয়ে এবং নগরীর আমির কুটিরের ছেলে, একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার ছেলে ও মেয়ে এবং ৩০ নভেম্বর পশ্চিম কাউনিয়ার মেয়ে এবং খুলনার বাগেরহাট জেলার ছেলের মধ্যে তালাক পরবর্তী পুনরায় মিমাংশা হয়েছে বলে সিটি কর্পোরেশন থেকে জানা গেছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply