Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
২৭২ কোটি টাকা ব্যায়ে যশোরের ভৈরব নদ খনন প্রকল্পে দখলদারদের রেখেই কাজ শেষ করতে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
--প্রেরিত ছবি

২৭২ কোটি টাকা ব্যায়ে যশোরের ভৈরব নদ খনন প্রকল্পে দখলদারদের রেখেই কাজ শেষ করতে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড

যশোর প্রতিনিধি: ২৭২ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯২ কিলোমিটার ভৈরব নদ খনন প্রকল্পের কাজ অবৈধ দখলদারদের রেখেই কাজ শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর। পাঁচ বছর মেয়াদি ভৈরব রিভার বেসিন প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন। এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। শহর অংশের চার কিলোমিটার
এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া খনন কাজ করা সম্ভব ছিল না। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নদের দু’ধারে জেলা প্রশাসনের খাসজমি এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। সবমিলে ভৈরব নদের গর্ভে ও তার পাড়ে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পরদিনই বেশ কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হন। সবশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ৮৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। অবশিষ্ট দেড় শতাধিক
স্থাপনা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গত তিন বছরে এই উচ্ছেদ নিয়ে আর
টুশব্দ শোনা যায়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দু’বার বাড়ানো হয়েছে।
বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২২ জুন। খনন কাজও শেষ প্রান্তে। তবে দুই ধারের হাঁটার পথ ও সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু এতো সময় অতিবাহিত হলেও দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি। নদীর মুল নকশার সাথে বর্তমান খননের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছেনা, ফলে খননের পর এটাকে নদী না
বলে খাল বলা চলে, শহরের দড়াটানা ব্রীজের দুইপাশ থেকে অবৈধ দখলদাররা তাদের দখলদারীত্ব বজায় রেখেছেন। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন রকম ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। নদীখননের পুর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যে ম্যাপ করা হয়েছিলো তার সাথে বর্তমান নদী খননের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছেনা।
সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে এসব দখলদারদের তালিকাটি প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। যশোর সদরে ভৈরব দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা সেই তালিকায় রয়েছে একতা ক্লিনিক, দড়াটানা হাসপাতাল, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কম টেক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দেশ ক্লিনিক, অর্থোপেডিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনতা সুপার মার্কেট, সম্রাট সুজ, প্রাইম সুজ, ছিট বিতান, এ্যানি সুজ, একতা ক্লথ স্টোর, তাসলিমা টেলিকম, মাংসের দোকান, বিজিবি ক্যাম্প, বিভিন্ন চায়ের দোকান, বাসা বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা। কিন্তু এ দখলদারদের কেউ উচ্ছেদ হয়নি। উপরন্তু ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য নদে ফেলে নদ দূষণ করা হচ্ছে।
এদিকে খনন শেষে দড়াটানা থেকে বাবলাতলা ব্রিজ পর্যন্ত নদের দক্ষিণ প্রান্ত ও গরিবশাহ মাজার থেকে দড়াটানা পর্যন্ত হাঁটার পথ করবে পাউবো। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না প্রশাসন। ফলে হাঁটাচলার রাস্তা ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজ করা হবে দখলদার রেখেই। আর সেটা হলে দখলদাররা স্থায়ী ‘দখল রাজত্বের’ সুযোগ পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদ-নদী প্রবাহমান
হতে হলে প্লাবনভূমি দরকার। ১৯২৬ সালের ভূমি জরিপ (এসএ) রেকর্ড অনুযায়ী ভৈরব নদ চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযোগ হবে। কিন্তু যশোর শহর অংশে ভৈরবের কোন প্লাবন ভূমি নেই। নদীখননে ভূমি নীতিমালা মানা হয়নি। দুই পাড়জুড়ে বহুতল ভবন। এটা ভৈরবের জন্য দুঃখজনক। এ বিষয়ে (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে তারা খনন শেষ করার চেষ্টা করছেন। তবে ওয়াকওয়ে, সৌন্দর্য বর্ধন কাজ শেষ করা সম্ভব
হবে না। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়াতে হবে। তবে দখলদার উচ্ছেদ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কথাবার্তা চলছে। তালিকাও করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিষয়টি আমি দেখবো। দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। যশোর শহরের দড়াটানার পশ্চিমপাশে ভৈরব নদের তীরের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা
হয়েছিল গত তিন বছর আগে। কিন্তু পূর্ব প্রান্তের দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। অবশিষ্ট দখলদার উচ্ছেদ করতে ওই সময় তোড়জোড় করেও শেষ পর্যন্ত থেমে যায় প্রশাসন। সেই দখলদার রেখেই ভৈরব খনন শেষ করতে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমনকি নদের দুই ধারে হাঁটার ও সৌন্দর্য বর্ধন করার সময়ও দখলদারদের গায়ে আঁচড় লাগছে না। ফলে সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি
হয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply