অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে পাঁচ দিন ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ক্রাশ প্রগ্রাম পরিচালনা করছে, চলবে আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত। তবে এই কর্মসূচি মশা নিধনে তেমন কাজে আসছে না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। এ পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে একটু হলেও স্বস্তির খবর দেবে বৃষ্টি—এমনটাই বলছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি, ঝড়-বৃষ্টির কারণে উড়ন্ত কিউলেক্স মশা মরে যায়। ফলে আগামী কয়েক দিন কমতে পারে এই মশার উপদ্রব। অবশ্য হালকা বৃষ্টির কারণে কিউলেক্সের প্রাদুর্ভাব সামান্য কমলেও এডিস মশার পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গরমে রাজধানীবাসীকে একটু স্বস্তি দিতেই যেন গতকাল বিকেলে নামে এক পশলা ধূলি-বৃষ্টি। আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল তিন মিলিমিটার। বৃষ্টিতে মানুষ সাময়িক আনন্দ পেলেও এর কারণে রাজধানীতে বাড়তে পারে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব। এমনটাই আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, গতকালের হালকা বৃষ্টিতে হয়তো কিছু কিউলেক্স মশা মরবে। তবে এই বৃষ্টির পানি বিভিন্ন পাত্রে জমে সেখানে এডিস মশার বংশ বিস্তার করতে পারে। বিশেষ করে করোনার জন্য রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু বেসিন (হাত ধোয়ার পাত্র) দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে পানি জমতে পারে। তা ছাড়া রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনার সঙ্গেও প্রচুর খালি বোতল বা পাত্র পড়ে থাকে। এগুলোতে বৃষ্টির পানি জমতে দিলেই সেখানে এডিস জন্মাবে। ফলে এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। সব পানি জমা পাত্র উল্টে দিতে হবে। এখন থেকে মাঝেমধ্যেই রাজধানীতে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে এডিসের প্রজননকাল আসার আগে থেকেই সবাইকে সচেতন হতে হবে বলেও সতর্ক করেন এই গবেষক।
এদিকে রাজধানীতে মশা বৃদ্ধিও পেছনে কাউন্সিলরদের দায়িত্বে অবহেলা আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সবার অবহেলা আছে বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর ভাটারা এলাকায় ডিএনসিসির মশক নিধন ক্রাশ প্রগ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন উত্তরের মেয়র।
৮ মার্চ থেকে রাজধানীতে মশা নিধনে বিশেষ ক্রাশ প্রগ্রাম পরিচালনা করছে ডিএনসিসি। গতকাল ছিল এই কার্যক্রমের পঞ্চম দিন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভাটারা থানার সামনের ১০০ ফুট সড়ক থেকে মশক নিধন ক্রাশ কর্মসূচি শুরু করে ডিএনসিসির দল। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসেন মেয়র আতিকুল। মেয়রের আগমনের আগে রাস্তাঘাটে বেশ পরিচ্ছন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মেয়রের সামনেও চলে সেই পরিষ্কার অভিযান। পরিদর্শনে এসে ভাটারা এলাকা ঘুরে দেখেন মেয়র। এ সময় মশক নিধনের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল বলেন, ‘রাজধানীতে এখন কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটু সময় লাগবে। আমরা মশা নিধনে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি। এই অভিযানে এক হাজার ৪০০ মশক নিধন কর্মী একযোগে কাজ করছেন।’
পরে মেয়র ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমনি এলাকার মশক নিধন কর্মসূচি পরিদর্শনে যান। সেখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম ভূঞার কার্যালয়ের পেছনের একটি ডোবায় মশার লার্ভা পায় ক্রাশ প্রগ্রাম পরিচালনাকারী দল। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমরা এই অভিযানে দেখেছি, ব্যক্তি মালিকানাধীন জলাশয়ে মশার প্রজনন বেশি। এসব জায়গা নিজ দায়িত্বে মালিককে পরিষ্কার রাখতে হবে। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘মাঝে মাঝেই আমরা এটা পরিষ্কার করাই। তবে এই জায়গাটা আসলে একটি ডোবা। এখানে বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। আজ (শনিবার) যেখানে লার্ভা পওয়া গেছে, সেটা আসলে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। পরিদর্শনের সময় অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালীসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।