ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতিকে কটাক্ষ করে একটি গোষ্ঠী নানামুখী অপতৎপরতায় লিপ্ত বলে জানিয়েছেন দেশের ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিক। এসব ঔদ্ধত্য ও হীন তৎপরতার প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার পাঠানো ওই বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি, একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ জনরায়ে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো, এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সব কিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকা ইত্যাদির কথাই বুঝিয়েছেন। সেটা আরো পরিষ্কার হলো, গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয়, যেখানে-সেখানে যা খুশি তা-ই বলা যায়।
যে উদ্দেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করছেন কিংবা অসত্য তথ্য প্রচার করছেন, তাদের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বৃহৎ কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো। আরো বলা হয়েছে, শত শত শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো, তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নিজেরা করির সমন্বয়কারি খুশী কবীর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান প্রমুখ।