Friday , 26 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বাসুদেব মন্দিরের কোটি টাকা আত্মসাত-  হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
--প্রেরিত ছবি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বাসুদেব মন্দিরের কোটি টাকা আত্মসাত- হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: হবিগঞ্জেরর  চুনারুঘাটে উপজেলার হাতুন্ডা গ্রামের বাসুদেব বাড়ির শ্রী শ্রী বাসুদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাবেক সেক্রেটারী প্রণয় কুমার পাল ও কোষাধ্যক্ষ বিধান রঞ্জন পালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তারা  দীর্ঘ ২২ বছর যাবত অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার অপব্যহার করে উক্ত মন্দিরের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। ৮ নভেম্বর রবিবার রাতে হবিগঞ্জ  প্রেসক্লাবে আয়োজিত মন্দির কমিটির সদস্য ও ভক্তবৃন্দের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করা হয়। এতে মন্দির কমিটির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুধীন্দ্র চন্দ্র করের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব। 
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত ১৪০৬ বাংলা থেকে ১৪২১ বাংলা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সরকারি অনুদানের টাকা যথাযথভাবে মন্দির উন্নয়নের কাজে ব্যবহার না করে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ টাকা ভূয়া মাষ্টার রোল দাখিলের মাধ্যমে প্রণয় পাল ও বিধান পাল আত্মসাত করেছেন। এ ছাড়া মন্দিরের প্রণামির বাক্সের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন দাতা ও ভক্তবৃন্দের পাঠানো টাকা আত্মসাত করেন তারা। এমনকি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কমিটি পুণর্গঠন ও অডিট না হওয়ায় স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে পরপর কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
এক পর্যায়ে বিষয়টি হবিগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে বিগত ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর চুনারুঘাট থানায় বসে আগের কমিটি বাতিল করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত আহ্বায়ক কমিটি থেকে প্রণয় পালকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে আহ্বায়কের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের অডিট কমিটি গঠনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ বিগত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের অডিট করেন ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর। কমিটি অডিটকালে বিধিবর্হিভূতভাবে খরচসহ অস্বচ্ছতা ও তহবিল তছরুপের সত্যতা পান।
 এমতাবস্থায় অডিট কমিটি ভবিষ্যতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতা বজায়ের স্বার্থে কমিটির সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে নগদায়নের পরামর্শ এবং ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো অনতিবিলম্বে সংশোধনের দিকনির্দেশনা দেন। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দসহ সকলের উপস্থিতিতে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মতে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও অডিট সম্পন্ন হলেও সেক্রেটারী প্রণয় কুমার পাল ও কোষাধ্যক্ষ বিধান পালের গোয়ার্তুমির কারণে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যতয় ঘটে এবং উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয়ের মন্দিরের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে আবারও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ভক্তবৃন্দের পক্ষে গৌতম গোপ ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। 
অভিযোগটি তদন্তের জন্য চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে। এরপরও বাসুদেব মন্দিরের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতকারী প্রণয় পাল ও বিধান রঞ্জন পাল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং অভিযোগকারীসহ নিরীহ ভক্তবৃন্দকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানায় গত ৪ জানুয়ারি গৌতম গোপ জিডি করেন। ভক্তবৃন্দ জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট সুবিচার না পেয়ে উপ-পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ বরাবরে গত ৩ নভেম্বর অপর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, দীর্ঘ ২২ বছরে প্রণয় পাল ও বিধান পাল একে অপরের যোগসাজশে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে মনগড়া ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অন্তত ৮১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৯ টাকা আত্মসাত করেছেন। আবার তা চুনারুঘাট পূবালী ব্যাংকে মন্দিরের হিসাব (১০২৪১০১০৬৯৭৩১) নং থেকে রেজুলেশন ছাড়াই ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া মন্দিরের বিভিন্ন ফান্ডে থাকা টাকা দিয়ে সেক্রেটারী প্রণয় পাল ও কোষাধ্যক্ষ বিধান রঞ্জন পাল পূবালী ব্যাংক রাজারবাজার শাখায় বিভিন্ন তারিখে ৮ লাখ টাকা এবং চুনারুঘাট শাখায় ৪ লাখ টাকা প্রণয় পালের নামে এফডিআর করা হয়। 
এ ছাড়া জনসম্মুখে প্রণয় পালের মৌখিকভাবে প্রকাশিত অংকের হিসাব পাচ্ছেন না ভক্তরা। পূবালী ব্যাংক চুনারুঘাট বাজার শাখায় বাসুদেব মন্দিরের হিসাব বিবরণী উত্তোলন করে ভক্তরা জানতে পারেন উল্লেখিতরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা প্রেরণ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি ও সত্যেন্দ্র দেব নারায়ণ, সদস্য ও সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি সুধীন্দ্র চন্দ্র কর, সদস্য কালিপদ আচার্য্য, সজল দাশ, বিজন দেব, অরুন চন্দ্র দেব ও বলাই চন্দ্র কর।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply