Sunday , 28 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

এক যুগের শাসনামলের মূল্যায়ন করবে জনগণ- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক যুগের শাসনামল মূল্যায়নের ভার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে আরো কী পরিকল্পনা নেওয়া হবে তা-ও সংক্ষেপে বর্ণনা করেন তিনি। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের দুই বছর পূর্তি ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে তিনি এই ভাষণ দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার একযোগে এই ভাষণ সম্প্রচার করে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যাঁরা ভূমিকা পালন করেছেন সেই সম্মুখযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই মনে করি। গত এক যুগে আমরা জনগণের জন্য কী করেছি, তা মূল্যায়নের ভার আপনাদের। দুই বছর পূর্বে আজকের এই দিনে তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার যে গুরুদায়িত্ব আপনারা আমার ওপর অর্পণ করেছিলেন, সেটিকে পবিত্র আমানত হিসেবে গ্রহণ করে আমরা সরকার পরিচালনার তৃতীয় বছর শুরু  করতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আজ অনেক দূর এগিয়েছি সত্য। আমাদের আরো বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্যের পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবই।’

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দ্য ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেওয়া হবে না : বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের যে মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে, তা যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিছু অসাধু মানুষ নানা কৌশলে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না।’

দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত : দেশে করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহতা কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এখনো সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অনেক কম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখার। আশার কথা, বিভিন্ন দেশে কভিড-১৯-এর টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আমরা দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছি। টিকা আসার পরপরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান করা হবে।’

বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির কথা একবার স্মরণ করুন। কী দুঃসহ পরিস্থিতি ছিল সে সময়। বিদ্যুৎ কখন আসবে আর কখন যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি।’

করোনাভাইরাস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত : করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে সদ্যঃসমাপ্ত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং উপর্যুপরি বন্যাও আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত সংকট থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারি ইতিমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে।’

প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখার চেষ্টা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন নীতি সহায়তা এবং উদারনৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা মোট জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় আড়াই কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আমরা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তার আওতায় এনেছি।’

প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি : শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭.৪ শতাংশে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২০-এ মাথাপিছুূ আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার।’

জাপান থেকে ট্রেন আসছে : প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মেট্রো ট্রেনের জন্য উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। শিগগিরই জাপান থেকে ট্রেন ঢাকায় পৌঁছবে। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর এই স্বপ্নের সেতু যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে।

ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত : প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই এই ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গোটা বিশ্বে একই পরিস্থিতি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আজ চোখে পড়ার মতো।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন হবে সাড়ম্বরে : আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকলে আমরা সাড়ম্বরে এই অনুষ্ঠান উদযাপন করব। একই সঙ্গে চলতে থাকবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।’

করোনাভাইরাসের এই অমানিশা দ্রুত কেটে যাক—মহান আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply