Sunday , 28 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুমিল্লায় ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কুমিল্লায় ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

মোঃ বশির আহমেদ, কুমিল্লা : 
কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, নাঙ্গলকোট ও মুরাদনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে স্থানীয় ইট ভাটাগুলোতে নেয়া হচ্ছে। কোথাও এক্সেভেটর দিয়ে, কোথাও ড্রেজিং করে আবার কোথাও কোদাল দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়ায় ক্রমশও হ্রাস পাচ্ছে এ উপজেলার আবাদি জমি। এতে করে কমছে কৃষিজমি।
চান্দিনার পানিপাড়া, মাইজখার, বদরপুর, মহিচাইল ইউনিয়নের খাটিগড়া, মাধাইয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর, মুরাদপুর, সুহিলপুর ইউনিয়নের সাতগাঁওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে।
চান্দিনার পানিপাড়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, শুধু দিনেই নয়, রাতেও চলছে মাটি কাটার হরিলুট। আমাদের এলাকায় ২টি ইটভাটা রয়েছে। ওইসব ইটভাটায় মাটির জোগান দিতে এলাকার ফসলি জমিগুলোর মাটি কেটে মৎস্য প্রজেক্ট করা হচ্ছে। এতে একদিকে আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে, রাস্তা-খাটগুলোর বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। ধুলা-বালিতে ধূসর হয়ে উঠেছে এলাকা৷ 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানিপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, ফসলি জমি কেটে ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করছে এ এলাকার বাসিন্দারা। কেউ লাভের আশায় আবার কেউবা বাধ্য হয়ে জমি থেকে মাটি বিক্রি করছে। আবার ওইসব ফসলি জমি গুলোর মাটি কেটে মৎস্য প্রজেক্ট করায় সরকারি অর্থায়নে নির্মিত সড়কগুলো দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।।
তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে মালিকপক্ষ লাভবান হচ্ছে, ইটভাটায় মাটি নিয়ে মালিকরা মুনাফা অর্জন করছে। আর রাস্তা-ঘাট নষ্ট করলে সরকারি অর্থায়নে সংস্কার করা হচ্ছে সড়ক ও সড়ক রক্ষার বাঁধ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চান্দিনা উপজেলার ১৯ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমি আবাদি। যা গত ৭ বছরের মধ্যে নতুনভাবে নির্ণয় করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তবে স্থানীয় সচেতন মহল জানান, গত ৭ বছরে অন্তত আরও ২-৩ হাজর হেক্টর আবাদি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অবশিষ্ট আছে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে।
চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম সুমন জানান, ফসলি জমি থেকে এক্সেভেটর (ভেকু), ড্রেজিং করে মাটি কেটে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করছে এসব বিষয়ে আমি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিনা আক্তার জানান, সম্প্রতি চান্দিনায় ব্যাপক হারে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করবো।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, এসব বিষয়ে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। তবে উপজেলা কৃষি অফিস এ পর্যন্ত আমাকে কোন তথ্যই জানায়নি। শীঘ্রই আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মাটিখেকো সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বিলীনের পথে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কৃষিজমি। ইট তৈরিতে প্রধান কাঁচামাল হলো মাটি। আর এই মাটির যোগান দিতে নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের তেমুরিয়া, চাপিতলা, আমিনগর, বিষ্ণপুর, বলিঘরসহ বিভিন্ন মাঠের ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে ইটভাটায়।
সূত্রে জানা যায়, ভাটার মালিকরা কৃষকের দারিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নামকাওয়াস্তে জমি কিনে প্রথমে মাটির ওপরের অংশ কেটে নেয়। পরে ড্রেজার বসিয়ে গভীর গর্ত করে বালি বিক্রি করেন, ড্রেজারের টানে পাশের জমির যখন ভাঙন শুরু হয় তখন ওই জমির মালিক মাটিখেকো সিন্ডিকেটের কাছে তার জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এভাবে ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমিগুলোকে একে একে গ্রাস করে নিচ্ছে।
উপজেলার তেমুরিয়া গ্রামের কৃষি জমির মালিক অলি উল্লাহ বলেন, আমার এখানে ৩৫ শতক জমি আছে। পাশের জমিটি যেভাবে কাটছে তাতে আমার জমিটিও একদিন বিলীন হয়ে যাবে। আমি এই কৃষি জমি রক্ষায় প্রশাসনের সাহয্য কামনা করছি।
সুশীল সমাজের অভিমত, এভাবে চলতে থাকলে একসময় দেশে আর কৃষিজমি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অদূর ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, একবার কোন জমির টপ সয়েল নিয়ে গেলে ওই জমিতে আর ১৫-২০ বছর ফসল হবে না। এব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। কৃষি জমিগুলো রক্ষায় সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। এরূপ চলতে থাকলে কৃষির আবাদি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে এবং কৃষিতে উৎপাদন কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল বলেন, আবাদি ভূমি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করার আইনগত কোন বিধান নাই, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিষেক দাশ বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।  

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply