Sunday , 5 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুষ্টিয়ায় পিবিআইর পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিকাইলের বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষককে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় পিবিআইর পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিকাইলের বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষককে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ

নিজেস্ব প্রতিবেদক \ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লাহিনী মধ্যপাড়ায় গত দুই বছর আগে লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র রতন শেখ(১৭) কে নির্মম ভাবে হত্যা করে দূর্বত্তরা। হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা আজম শেখ বাদী হয়ে মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৩/১৯ইং। পরে মামলাটি অধিকত্বর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) কুষ্টিয়া জেলাকে তদন্তের আদেশ দেয় আদালত। সে সময় মামলার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পিবিআই এর পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিকাইল হোসেনের উপর। মামলার তদন্ত শুরু থেকেই লাহিনী মধ্যপাড়ার কিছু মাদক ব্যবসায়ী, চরমপন্থী নেতাদের সাথে সক্ষতা গড়ে সাধারণ নিরহী মানুষের ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা চঁাদা দাবী করে, না দিলে চরম নির্যাতন করা হয় ভুক্তভ্থগিদের উপর এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আর এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লাহিনী মধ্যপাড়া গ্রামের নিরীহ স্কুল শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ও তার পরিবার। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র মতে, লাহিনী মধ্যপাড়ায় গ্রামের কিয়ামউদ্দিনের ছেলে ও স্থানীয় লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী এলাকায় নিজাম মাষ্টার নামেপরিচিত। তাকে ও তার পরিবারকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে এসআই মিকাইলের দ্বারা। ঘটনার তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী নিজাম মাষ্টারের বাড়ী সংলগ্ন কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে শরীফ বিশ্বাসের পরিত্যাক্ত বাড়ী থেকে স্কুল ছাত্র রতনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ীর কাছে লাশ পাওয়ার সুত্র ধরেই সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই এর বহুল আলোচিত এসআই মিকাইল হোসেন নিজাম মাষ্টারের পরিবারের উপর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে লেলিয়ে দেয় স্থানীয় কিছু চরমপন্থী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা এস অঅই মিকাইল নিজাম মাষ্টারের নিকট মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবী করে। কিন্তু অসহায় নিজাম মাষ্টার কোন অপরাধের সাথে জড়িত না থাকায় ঘুষখোর এসআই মিকাইলের টাকা দিতে অস্বীকার করেন। সেই ঘুষের টাকা না পেয়ে নিজাম মাষ্টারের পরিবারের ৩ ভাই, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পিবিআই অফিসে তলব করা হয় কোন সুনিদৃষ্ট কারণ ছাড়াই। এভাবে বেশ কয়েকবার হয়রানী করলেও শিক্ষক নিজাম মাষ্টার ঘুষখোর মিকাইলকে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। টাকা না পেয়ে মিকাইল বেশ কয়েক দফায় গত বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তাদের পরিবারের সাথে বার বার দেখা করে এবং পিবিআই অফিসে ডেকে নিয়ে নানা ভাবে হয়রাণি করে। সেই সুত্রধরেই ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর কুষ্টিয়া শহরের পলিটেকনিক্যাল কলেজের গেট থেকে পরীক্ষা শেষ বের হওয়ার সময় এসআই মিকাইল নিজামমাষ্টারের ছোট ছেলে পলিটেকনিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষার্থী নাহিদ হাসানকে পিবিআই অফিসে নিয়ে যায়। পরে বিনা অজুহাতে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। পরে রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করলেও তেমন কোন তথ্য আদালতে দেখাতে পারেননি এসআই মিকাইল। এ ঘটনার পরও থেমে নেই এসআই মিকাইল। ছেলেকে নির্যাতন করেও সঠিক কোন তথ্য না পেয়ে, পরে নিজাম মাষ্টারকেও ডেকে নিয়ে যায় পিবিআই অফিসে। লাহিনী বটতলার আলতুর হোটেলের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে তুলেই তার চোখ বেঁধে শুরু হয় নির্যাতন। এর পর পিবিআই অফিসের একটি কক্ষে বিশেষ ধরনে ঔষধ সেবন করিয়ে হাত-পা বেঁধে জানালার গ্রীলের সাথে ঝুলিয়ে পায়ে, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অমানসিক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তার সন্তানদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে ও মোবাইল ফোনে মনগড়া স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও করে পিবিআই এর এসআই মিকাইল। উদ্দেশ্য যাতে এসআই মিকাইল কোন ভাবে ফেঁসে না যায়। এ ঘটনার পরের দিন দুপুরে বিভিন্ন শর্ত ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নিজাম মাস্টারের ছেলে ও ভাইয়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করে। সে সময় পিবিআইয়ের সেই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিকাইলের নির্যাতনে শিকার হওয়া স্কুল শিক্ষক নিজাম মাষ্টার অসুস্থ্য হলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভাবে একের পর এক নির্যাতনের ঘটনায় নিজাম মাষ্টারের পরিবার চরম অতংকের মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভুগি পরিবার অভিযোগ করে বলেন, ঘুষের টাকা না দিতে পারায় আজ তাদের পরিবারের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চলছে। এ ঘটনার পর এসআই মিকাইল স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের দিয়ে নিজাম মাষ্টারের পরিবারের উপর হামলা চালায় বলেও অভিযোগ আছে। লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, নিজাম মাষ্টার এলাকায় ভালো শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তিনি বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী শুধু নয় সকলের কাছে অত্যান্ত ভালো মানুষ। সমাজ সেবকও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে কিন্তু নির্মম নির্যাতনের করার অধিকার তো তাদের নেই। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লাহিনী গ্রামের বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নং কাউন্সিলর ইসলাম শেখ জানান, আমরা সকলেই চাই হত্যাকারী আটক হোক। কিন্তু মূল হত্যাকারীদের আটক না করে শিক্ষক গুরু নিজাম মাষ্টারের পরিবারকে বার বার হেনস্থা করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ এলাকাবাসীও দিতে পারে নাই অথচ পিবিআই এর সেই কর্মকর্তা বার বার হেনস্থা করছে। বিষয়টি আমলে নিতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিমামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) এর এসআই মিকাইল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, ঘুষ দাবী করা ও নির্যাতনের বিষয়টি সত্য না। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শহিদ আবু সরোয়ার জানান, এই বিষয়ে আমার কাছে তোন অভিযোগ বা তথ্য নেই। একটি মামলা তদন্তের স্বার্থে আমাদের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এই মামলার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগতি রয়েছে। পিবিআই এর এসআই মিকাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই বলেও জানান পিবিআই পুলিশ সুপার। তবে এলাকাবাসীর দাবী দোষি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ সুপারসহ উদ্বোধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply