Friday , 3 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে টেকসই করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা চান।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেসরকারি খাতের অবদান, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এই সমর্থনের কথা জানান।

সব ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ : এফবিসিসিআই সভাপতি : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে এক রোল মডেল বাংলাদেশ।

সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন এবং আমাদের (ব্যবসায়ীদের) যে অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ধরে রাখার জন্য আপনাকে প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আপনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে চাই। এ জন্য সব ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা সবাই আগামী দিনে আপনার নেতৃত্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে চান।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জসিম উদ্দিন আরো বলেন, ‘সুতরাং আমরা মনে করি, আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনাকে আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে। আমাদের জন্য, দেশের জন্য থাকতে হবে।’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দাবি : সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের জন্য দরকার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো। আর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের দেশ : বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ গড়তে। এ জন্য তাঁর সুযোগ্য কন্যা দিন-রাত কাজ করছেন। তাঁর সরকার টানা তিন মেয়াদে সুপরিকল্পিভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় বাংলাদেশ বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অবস্থানের দিকে এগিয়ে গেছে। ফলে গত ১৪ বছরে বাঙালি জাতিকে বিশ্বদরবারে এক অনন্যতায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বের অন্যতম পাঁচটি দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে।

কর খাতে সংস্কার দরকার : চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অলস সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হচ্ছে। জ্বালানি আমদানি করতে না পারার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ জন্য কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগ দরকার। রেলওয়ে খাত সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে কর বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাহলে আদালতের আর প্রয়োজন কী থাকল? কর বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনোভাবেই বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না। বরং কর খাতের ব্যাপক সংস্কার দরকার। তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে আট লেনের পরিবর্তে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করেন।

ইতিহাসে বড় পরিবর্তন : ব্যবসায় সহজীকরণে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, একসময় ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল এক বছর। এর ফলে অনেক হয়রানি হতো। সেটা এখন পাঁচ বছরের জন্য পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সে জন্য আমদানি-রপ্তানি এবং বন্ড লাইসেন্সও এক থেকে তিন বছর ও পাঁচ বছর হয়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামীর সাত্তার বলেছেন, উন্নয়নের জন্য সবার আগে দরকার স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। দেড় দশক ধরে দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ রয়েছে এবং সরকারের ধারাবাহিকতা রয়েছে, যে কারণে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা ও উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম অঙ্গ স্মার্ট এডুকেশন। বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে হলে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনে জোর দিতে হবে। বেসরকারি খাত সরকারের সঙ্গে এক জোট হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। সরকার সেই সুযোগ করে দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ফলে পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আধুনিকতার উৎকর্ষে বদলে যাবে বাংলাদেশ। সে জন্য শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার।’

নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে, আজ আমরা তাঁকে স্বপ্ন দেখাব। সেই স্বপ্নটা কী? আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সবারই স্বপ্ন তেল, ডিজেল, পেট্রল ছাড়া গাড়ি চালানো, যেই গাড়িটা মেড ইন বাংলাদেশ লেখা। যেই গাড়ি ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে ডিজিটালি যুক্ত হবে। এমন গাড়ি যে চালকই লাগবে না, নিজে নিজে চলবে। এ রকম গাড়ি চাই। এই স্বপ্ন, এই অনুষ্ঠান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিলাম।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, গত ১৪ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আগে হয়নি। এখন অনেক প্রজেক্ট অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে আছে। সরকার পরিবর্তন হলে সব প্রজেক্ট বন্ধ হবে।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে মাত্র ১.৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চামড়ার জুতায় ১.২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়েছি। লেদার গুড থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং চামড়া খাত থেকে মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার।

সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এটা দ্বিগুণ হতে পারত। যদি সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারিপল্লীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকর করা যায়। এটাকে তিন বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারে করে দেওয়া যায় সরকারের ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে। যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউরোপিয়ান কম্পানিকে সিইটিপি করার দায়িত্ব দেওয়া যায়।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যন আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরিবার গত সাত যুগ ধরে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাঁর নির্দেশনায় কাজ করে যাব। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে। সামনে আঞ্চলিক বাণিজ্যে তাঁর নেতৃত্বে আরো এগিয়ে যাবে।’

এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মার্চে ব্যবসা সম্মেলন আয়োজন করেছিল সংগঠনটি। ওই সম্মেলনে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৬টি অধিবেশনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। সেগুলো একত্র করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সেই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে এফবিসিসিআই।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মীর নাসির হোসেন ও কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মোহাম্মদ আবুল বাশার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শেখ নাসির উদ্দিন, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মুক্তাদির, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব-উর রহমান, বাংলাদেশ নারী শিল্প ও বণিক সমিতির (বিডাব্লিউসিসিআই) সভাপতি সালিমা আহমেদ, জেবিসিসিআই সভাপতি মিউং-হো লি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ইন্ডিটেক্সের আঞ্চলিক প্রধান জাভিয়ের কার্লোস সান্তোজা ওলসিনা, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply