Tuesday , 19 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইন ঝুঁকিতে
--মানচিত্রে রেলপথ

দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইন ঝুঁকিতে

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের ৪৩ জেলার ৩৯টিতেই রেললাইনে সমস্যা। রেলের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইন ঝুঁকিতে। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করা এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত রেললাইনে সমস্যার কারণে বেশি দুর্ঘটনা হয়। সঙ্গে অনেক সময় সাংকেতিক জটিলতা এবং মানুষের ভুলও দায়ী। দেশের বেশির ভাগ রেললাইনের অবস্থাই ভালো নয়।

রেলের মান ও লাইনের অবস্থা যাচাই করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে করা ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দেশে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার রেললাইন ও রেলপথের অবস্থা খারাপ।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘মূলত রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমন দুর্ঘটনা হচ্ছে। আমাদের রেললাইনগুলোর অবস্থা ভালো নয়। নিয়মিত দেখভাল করা হলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

পূর্বাঞ্চলে রেলপথে আছে ১,৩৩৩.৯৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিটার গেজ ১,২৯৯.০৪ কিলোমিটার, ডুয়াল গেজ ৩৪.৮৯ কিলোমিটার, ব্রড গেজের রেলপথ নেই। আর পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথ আছে ১,৭৫৯.৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিটার গেজ ৩৮০.৭৯ কিলোমিটার, ব্রড গেজ ৮৭৯.৮৫ কিলোমিটার, ডুয়াল গেজ ৪৯৮.৮১ কিলোমিটার।

আর পূর্বাঞ্চলে রেললাইন ২,১৫১.৭৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিটার গেজ ২,০৪০.৯০ কিলোমিটার, ডুয়াল গেজ ১১০.৮৯ কিলোমিটার, ব্রড গেজের কোনো রেললাইন নেই। পশ্চিমাঞ্চলে রেললাইন ২,২৮৬.৬১ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিটার গেজ ৫৩৩.০৬ কিলোমিটার, ব্রড গেজ ১,১৩৩.৩৮ কিলোমিটার, ডুয়াল গেজ ৬২০.১৭ কিলোমিটার।

কোথায় কোথায় সমস্যা : রেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় সমস্যা বেশি। এই অংশে ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নতুন করে করতে হবে। ৪০০ কিলোমিটার পথে রেল পরিবর্তন করতে হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথে স্লিপারসহ অন্য সরঞ্জাম পরিবর্তন করতে হবে। পূর্বাঞ্চলের রেলপথে পাঁচ লাখ কিউবিক মিটার পাথরের ঘাটতি আছে।

রেলের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকায় রেলপথে এসব সমস্যা রয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, ছাগলনাইয়া, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, লাকসাম, চাঁদপুর সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কসবা, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব বাজার, নরসিংদী, টঙ্গী, ঢাকা সিটি করপোরেশন, কুলাউড়া, সিলেট সদর, ছাতক, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, জামালপুর সদর ও গৌরীপুর এলাকায় জটিলতা বেশি।

এদিকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২৩ জেলায় সমস্যা বেশি। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় কাজ করতে হবে। এই পুরো অংশে প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার রেললাইনের অবস্থা ভালো নয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, অনেক জায়গায় রেললাইনে সমস্যা আছে, সেটা সত্য। অনেক লাইন পুরনো হয়ে গেছে। একটি সমীক্ষা করে বর্তমান অবস্থা কেমন, সেটি দেখা হয়েছে। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

আসছে নতুন দুই প্রকল্প : রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আলাদা দুটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলপথ পুনর্বাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প নামের দুই প্রকল্প চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

রেলের করা সমীক্ষার ভিত্তিতেই প্রকল্প পাসে জোর দেওয়া হচ্ছে। পূর্বাঞ্চল নিয়ে রেল ভবনে সম্প্রতি বৈঠক হলেও পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে বৈঠক করা হয়নি। পূর্বাঞ্চলের বৈঠকের সারসংক্ষেপ তৈরি হলেই পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে বৈঠক করা হবে। তারপর দুই প্রকল্পের চূড়ান্ত সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

তবে দুই প্রকল্পের ডিপিপিতে খরচের ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। ডিপিপি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬০ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার টাকা। পশ্চিমাঞ্চলের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৩১ কোটি দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ডিপিপিতে বলা হচ্ছে, দুর্ঘটনা হ্রাস, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহন বাড়ানো এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকল্প দুটি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় রেল। আর ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় পশ্চিমাঞ্চলের কাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এই দুই প্রকল্পের পুরো টাকাই জলে যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও বড় সাফল্য আসবে না। কিছু অংশ ভালো আর কিছু মোটামুটি; এতে সার্বিক অবস্থা ভালো হবে না। তা ছাড়া রেল নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা আছে, ধীরে ধীরে রেলের সব পথ ডুয়াল লাইন ব্রড গেজ করতে হবে। সেখানে এখন পুরনো মিটার গেজ লাইন নতুন করে করা অর্থের অপচয়।

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply