Thursday , 2 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ কমছে অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোর
--সংগৃহীত পরিসংখ্যান

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ কমছে অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোর

অনলাইন ডেস্ক:

তহবিল স্বল্পতাসহ একাধিক কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছে অভিজ্ঞ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো। সক্রিয় নেই ২২টি অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থার সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডাব্লিউজি)। এর বাইরে কয়েকটি সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ আছে। নির্বাচন কমিশনও কয়েকটি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয়নি।

কেন আগ্রহ হারাচ্ছে অভিজ্ঞ সংস্থাগুলো

বর্তমানে নিষ্ক্রিয় ইডাব্লিউজির সাবেক পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয় তখন স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো অর্থ সহযোগিতা করে না। অর্থ সহযোগিতা না পেলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। মূলত এই কারণে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো আগ্রহ হারাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করে আসা সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পাইনি। কেন নিবন্ধন দেওয়া হয়নি, তার জবাবও পাওয়া যায়নি। এবারও নির্বাচন কমিশন বাছাই করা যে ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে ব্রতীর নাম নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সাড়া পাইনি।’

শারমিন মুরশিদ বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যেসব সংস্থার গ্রহণযোগত্যা আছে, নির্বাচন কমিশনেরই উচিত সেসব সংস্থাকে খুঁজে বের করা। এবার বেশির ভাগ নামসর্বস্ব সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের গুরুত্বটিই খাটো হয়ে যাবে মনে হয়।

আরেকটি অভিজ্ঞ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমা সম্পর্কে জানতে চাইলে এ সংস্থার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এখন আর ফেমার কার্যক্রম নেই।

কেন প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর মতে, স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে না পারার মূল কারণ বেশির ভাগ সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়টি হচ্ছে ‘মৌসুমি ব্যবসা’। তিনি বলেন, নির্বাচন এলে দাতা সংস্থার কাছ থেকে  তহবিল পাওয়া গেলে কাজ করব—এই চিন্তা-ভাবনা থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে রাখে। তহবিল না পেলে এসব সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় না। আবার দাতা সংস্থাগুলো তহবিল দিতে চাইলেও সরকার যদি অনুমোদন না দেয় তখনো একই সমস্যা হয়।

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সমস্যা হয়েছিল। এবারও দাতা সংস্থাগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আসলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা হওয়া প্রয়োজন শুধুমাত্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য। দাতা সংস্থার কাছ থেকে তহবিলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে রোটারি ক্লাব বা লায়ন্স ক্লাবের মতো স্বতঃপ্রণোদিতভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এই সংস্থার কাজ করা উচিত। তাহলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং তহবিল মিলছে না বলে আগ্রহে ভাটা পড়বে না।

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, নির্বাচন কমিশন থেকে বেশিসংখ্যক পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন পেলে বিষয়টি হবে এক অর্থে ইতিবাচক। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, শত ফুল ফুটতে দাও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বেশির ভাগ নামসর্বস্ব সংস্থা নিবন্ধন পেলে এর নেতিবাচক দিকও থাকতে পারে। এসব সংস্থার সক্ষমতা কম থাকার কারণে সব নির্বাচনী এলাকায় এরা পর্যবেক্ষক দিতে পারবে না। একই এলাকায় একাধিক সংস্থা কাজ করবে। আবার কোনো এলাকা ফাঁকা থাকবে।

তহবিল প্রাপ্তি নিয়ে গতবার যা হয়েছিল 

গতবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২২টি সদস্য সংস্থা  নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। বিদেশি তহবিল পেতে এনজিও ফোরামের কাছে অনাপত্তিপত্র পায় সাতটি সংস্থা। ফলে ১৫টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি।

বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড়ের জন্য এনজিও ব্যুরো থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। এনজিও ব্যুরোর অনাপত্তিপত্রের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র লাগে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো সাধারণত দাতা সংস্থার কনসোর্টিয়াম থেকে এশিয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকে।

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও মো. আবদুল আলীম জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইডাব্লিউজি থেকে ৩০০টি আসনে ১৫ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ইডাব্লিউজিভুক্ত সব সংস্থা তহবিল না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিএনপি ও তাদের  জোটভুক্ত দলগুলো একেবারে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়। এ কারণে তহবিল প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার সঙ্গে আমাদের প্রস্তুতিরও ঘাটতি ছিল।’

গত চার নির্বাচনে যত পর্যবেক্ষক

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০০১ সালের নির্বাচনে দুই লাখ ১৮ হাজার স্থানীয়  এবং ২২৫ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল। ২০০৮ সালে স্থানীয় পর্যবেক্ষক ছিল এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন এবং বিদেশি ৫৯৩ জন।

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে স্থানীয় পর্যবেক্ষক ছিল আট হাজার ৮৭৪ জন। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলোর ফোরাম ফেমবোসার সদস্য হিসেবে ভারত ও ভুটানের দুজন করে চারজন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১১৮টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৮১টির ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে সবাই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছিলেন না। বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৩৮ জন অংশ নেন। কূটনীতিক ও বিদেশি মিশন থেকে অংশ নেন ৬৪ জন।

নিবন্ধিত সংস্থার সংখ্যাও কমছে

২০০৮ সালে ৩১৯টি সংস্থা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ১৩৮টি  সংস্থাকে বেছে নেয় নির্বাচন কমিশন। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১২০টি সংস্থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১১৯টি সংস্থাকে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply