Thursday , 2 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
পরস্পরের সহযোগিতা থাকলে  জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী
--সংগৃহীত ছবি

পরস্পরের সহযোগিতা থাকলে জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী

অনলাইন ডেস্ক:

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত এবং ভৌগোলিক সেতুবন্ধ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে ভারতের সরকার এবং সে দেশের জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল।

ভারতকে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।’

গতকাল শুক্রবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানমালার সমাপনীতে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকার জন্য ভারতের সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া এই শুভ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মর্যাদাশীল ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত করায় মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে এই পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একজন যোগ্য নেতা এবং গান্ধিজীর প্রকৃত অনুসারীকেই সম্মানিত করল। একই সঙ্গে ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য ১০৯টি অ্যাম্বুল্যান্স উপহার দিচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, তাঁর সরকার এবং ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে উভয় দেশ বেশ কিছু যৌথ কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া এ উপমহাদেশের দুই বরণীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ভারত সরকার ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী’র উদ্যোগ নিয়েছে। আমি এ জন্য ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ভারতের এক উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা শহীদ হয়েছেন। আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য-সহযোগিতা তা কখনো ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দুই বোন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যাই। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আমার পরিবার এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর সরকার ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাসহ ২২৫ জন ভারতীয় নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছে। তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিজীর ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠানোর মাধ্যমে মোদিজীর এই নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলো এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে।’

নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে তাঁর সরকার। বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে সব ভেদাভেদ ভুলে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply