Friday , 26 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তার এর অবসর গ্রহণ উপলক্ষ্যে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তার এর অবসর গ্রহণ উপলক্ষ্যে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টারঃ পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তার এর অবসর গ্রহণ উপলক্ষ্যে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন ঢাকা -১৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। প্রধান অতিথিকে বিদায়ী অধ্যক্ষ ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করেন। এমপি মহোদয়ের ২য় কন্যা নাফিসা তাবাসসুম ইয়াশা (সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) বিদায়ী অধ্যক্ষের হাতে ক্রেষ্ট তুলে দেন এবং বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ। শিক্ষকবৃন্দের পক্ষ থেকে বিদায়ী অভিনন্দন বক্তব্য রাখেন, প্রভাষক ফাতেমা তুজ জোহরা শিউলি। তিনি বলেন, তোমাকে ভুলে থাকা যায় না। তুমি ছিলে, আছো, থাকবে। পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়——যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এই কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। তার অবদান এবং শুন্যতা আমরা কোন দিন ভুলতে পারবোনা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন মোঃ মুতাসিম বিল্লাহ্। বর্তমানে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, মোঃ আলমগীর হোসেন। গতকাল ১৬ নভেম্বর ২০২২ খ্রীঃ ১ অগ্রহায়ণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, দুপুর ২ ঘটিকায় অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন পাঠ দিয়ে শুরু হয় পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ বলেন, বিগত ২৯ বছরে অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আপা অনেক ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকাকে বিদায়ি সংবর্ধনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তারকে বিদায়ি সংবর্ধনা দিতে এসে আমি খুবই ব্যথিত। এই ২৯ বছর তিনি কলেজটির অনেক উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি বলেন, বিদায় শব্দটি সব সময় কষ্টের হয়ে থাকে, যিনি সব সময় তার হাত দিয়ে বহু শিক্ষককে বিদায় দিয়েছেন, ২৯ বছর শিক্ষকতা করেছেন, এই কলেজের হাজার হাজার ছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠান করে বিদায় দিয়েছেন। কালের বির্বতনে সময়ের সাথে সাথে সবাইকে একদিন বিদায় নিতে হয়। এই কলেজ প্রাঙ্গনে তিনি আর না থাকলেও তাঁর আচার, ব্যবহার, আদর, ভালোবাসা, প্রতিটি গাছপালা, কলেজের প্রতিটি কক্ষ চেয়ার-টেবিল সবখানেই আপা থাকবেন। ( মাননীয় সাংসদ অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তারকে আপা বলেন ডাকেন )। বিদায়ি অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি যে কোন সময় আসবেন, আমাদের পরামর্শ দিবেন। নিয়ম অনুযায়ী আপা চাইলে তিনি ১/২ সময় বাড়াতে পারতেন।
আপনার জন্য এই কলেজের প্রতিটি দরজা-জানালা উম্মুক্ত থাকবে। এই পদে যিনি বসবেন তিনি সবার সাথে এক ও অভিন্ন হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা বলে থাকি, ”শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চরে সে। কিন্তু আমি বলি, ”লেখাপড়া করে যে, ভালো মানুষ হয় সে”। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। কলেজের অবকাঠামো সংস্কারের জন্য অধ্যক্ষ আপা আমাকে বারবার ৮ তলা ভবন নির্মাণ করার তাগিদ দিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা পেশ করতেই তিনি রাজি হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী কলেজের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। কাজ শুরু করার পরপরই করোনার কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়। এখন শীঘ্রই ৮ তলা ভবনের কাজ শুরু হবে এবং লিফটের সুবিধা থাকবে। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা ভাল রেজাল্ট কর, আমি একশত ভাগ দিব। তোমরা জোরে জোরে এক ঘন্টা হলেও পড়বে। ফেইসবুকে সময় কম দিবে। তাহলে রেজাল্ট ভালো হবে। তাহলে সবার ভালোবাসা ও সম্মান পাবে। আমাকে ১০০% রেজাল্ট দেখাও আমি ১০০% সুযোগ সুবিধা দিব।


বিদায়ী অধ্যক্ষ বেগম নিলুফার আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, উপস্থিত প্রধান অতিথি জনাব আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ এমপি ঢাকা -১৬, এবং বিশেষ অতিথি গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ আমার প্রিয় ছাত্রীবৃন্দ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, বিশেষ করে বিদায় অনেক কষ্টের, আজ আমার এই বিদায় মুর্হুতে আমার প্রাক্তন ছাত্রীরাও এবং অভিভাবকবৃন্দ এসেছেন সবাই আমাকে এত ভালোবাসে আমি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামিন এর প্রতি কৃতজ্ঞ। এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি ছিল আমার প্রাণ। এই প্রতিষ্ঠানে কাল থেকে আর আসবো না, চেনা মানুষ গুলোর সাথে দেখা হবে না, সত্যিই অনেক কষ্টের।
এই প্রতিষ্ঠানটি হলো আমায় দ্বিতীয় পরিবার সকাল থেকে রাত অবধি আমি আপনাদের সাথে কাজ করেছি। এমপি স্যারকে আমি যখন যা বলেছি, তিনি তাই করতে চেষ্টা করেছেন, শিক্ষকদের ৪৬ মাসের বেতন তিনি পরিশোধ করেছেন। ৮ম তলা বিল্ডিং এর অনুমতি দিয়েছিলেন করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আজ তিনি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী তিন মাসের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে বলে বরাদ্ধ নিবেন। অধ্যক্ষ এমপি মহোদয়ের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করেন। তিনি হজে¦ যাবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমি ১৯৯৪ সালে এই কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আজ আমি অধ্যক্ষ হয়ে ২০২২ সালে অবসর গ্রহণ করছি। সময় শেষ হলে, চলে যেতেই হয় এটাই নিয়ম। মানুষ মাত্রই ভুল করে, আমিও একজন মানুষ, আমার ব্যবহারে কেউ যদি কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। এই দীর্ঘ ২৯ বছর কর্মজীবনে আমি ন্যায়, সত্যের পথে চলতে চেষ্টা করেছি। ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- তোমরা মেয়েরা ভালো ভাবে পড়াশোনা কর তোমাদের জীবন অনেক কঠিন, লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে যাও, নিজের একটি পরিচয় তৈরী করো। আমি চাই, আমার ছাত্রীরা আমার চেয়েও উচু জায়গায় অবস্থান তৈরী করুক। তোমরা দেশকে ভালবাসবে। লেখাপড়া কওে ভালো মানুষ হও। চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়, আমি মাঝে মাঝেই আসবো তোমাদের সাথে দেখা করতে। আগামীতেও যেকোন প্রয়োজনে আপনারা আমাকে পাশে পাবেন। সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাই কাঁেধ কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। ছাত্রীদের প্রতি সহানুভ’তিশীল হবেন। আমি কলেজ ছেড়ে যাচ্ছিনা। আমি মাঝে মাঝেই আসবো। আপনারদের এবং ছাত্রীদের ছেড়ে থাকতে পারবোনা।
পরিশেষে তিনি তার প্রয়াত স্বামী সৈয়দ এনামুল হক এর কথা বলেন, যার সহযোগিতা না থাকলে আজ এখানে আসতে পারতাম না। যিনি সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। গত দুইবছর হলো তিনি ইন্তেকাল করেছেন। সবার কাছে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বিদায় মানে কস্ট, বেদনা, হাহাকার, দুঃখ যার জন্য এই আয়োজন। তিনি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তার যোগ্যতায় ধাপে ধাপে অধ্যক্ষ পদ অর্জন করেন। তার মত একজন সৎ , নিষ্ঠাবান অধ্যক্ষ বড়ই প্রয়োজন। সময় শেষ হয়ে গেলে একদিন সবাইকেই চলে যেতে হয়। তিনি অনুরোধ করেন যে কোন প্রয়োজনের সময় আমরা যেন তাকে পাশে পাই।

৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ২৭ বছর একসাথে কাজ করেছি। প্রশাসনিক সকল কাজে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। মায়ের মত আমাদেরকে আগলে রেখেছেন। তিনি আমাদেরকে খুবই ভালবাসতেন। বিদায়ী অধ্যক্ষের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

 

 

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply