Sunday , 28 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

বঙ্গবন্ধু বললেন,আর আলোচনা নয়- এবার ঘোষণা চাই

অনলাইন ডেস্ক:

২৪ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের ২৩তম দিন। ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধুর বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিদায় জানিয়ে করাচি ফিরে গেলেন। তবে প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও ইয়াহিয়া খানের পরামর্শদাতাদের মধ্যে সকাল ও সন্ধ্যায় দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তাঁর ঘোষণা দেওয়া।

ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে বিক্ষুব্ধ জনতার জঙ্গি মিছিলের স্রোত নামে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন। জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার মাথা কেনার শক্তি কারো নেই। বাংলার মানুষের সাথে, শহীদের রক্তের সাথে আমি বেঈমানি করতে পারবো না। আমি কঠোরতর সংগ্রামের নির্দেশ দেয়ার জন্য বেঁচে থাকবো কি না জানি না। দাবি আদায়ের জন্য আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালি নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।’

সারা দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনীর হামলার খবর আসতে থাকে। ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্ষুব্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র অধিবাসীদের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়। ঢাকার মিরপুরেও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মিরপুরে অবাঙালিরা সাদা পোশাকধারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের ছাদ থেকে বাংলাদেশের পতাকা ও কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারিরা সেখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে রংপুর, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানে সামরিক অ্যাকশনের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তবে এর মধ্যেও অসহযোগ আন্দোলন ও বাংলার স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ অব্যাহত থাকে। যশোরে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের হেডকোয়ার্টার্সে রাইফেলের জোয়ানরা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান গেয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন এবং পতাকাকে অভিবাদন জানান।

চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনারা নৌবন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে হাজার হাজার বাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে ব্যারিকেড রচনা করে। সেনাবাহিনী তখন জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply