Thursday , 2 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

বঙ্গবন্ধু বললেন, ভালো এবং খারাপের জন্য আশাবাদী ও প্রস্তুত

অনলাইন ডেস্ক:

১৯ মার্চ, ১৯৭১। এক দিন বিরতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের তৃতীয় দফা বৈঠক হলো। দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কোনো সহকারী উপস্থিত ছিলেন না। প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠক থেকে বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে বেরিয়ে আসেননি। কিন্তু তৃতীয় বৈঠকের পর তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে আবার ঘিরে ধরলেন সাংবাদিকরা।

প্রশ্ন : আলোচনার কোনো অগ্রগতি?

উত্তর : আপনারা অনুমান করে নিন।

গত দুই দিনের তুলনায় এবার বক্তব্যের ভিন্নতা লক্ষ করে উৎসাহী হয়ে ওঠেন সাংবাদিকরা।

প্রশ্ন : তাহলে আপনি আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যাবেন?

উত্তর : আমার বক্তব্য পরিষ্কার। হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত যাব না।

প্রশ্ন : ভুট্টো যদি আসেন দেখা করবেন?

উত্তর : আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা। রাস্তার একজন সাধারণ মানুষও যদি আসে তার সঙ্গেও কথা বলব।

একজন বিদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ঢাকায় যে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে সে খবর কি আপনি রাখেন?

বঙ্গবন্ধু একমুহূর্ত দেরি না করে জবাব দিলেন, রাখি।

তার পরও ‘আলোচনায় এক ধাপ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে আজ বঙ্গবন্ধুর যে সহাস্য মুখ দেখা যাচ্ছে তা কতদূর ফলদায়ক জানতে সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, আপনি কি আশাবাদী?

বঙ্গবন্ধু জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ ভালোর জন্য আশাবাদী, তবে খারাপের জন্যও প্রস্তুত।’ (রশীদ হায়দার, ‘অসহযোগ আন্দোলন : একাত্তর’)

‘জয় বাংলা’ প্রসঙ্গে এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি মুসলমান। ঘুম থেকে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করি, তার পরই ‘জয় বাংলা’ বলি। মৃত্যুর সময়ও আমি আল্লাহর নাম নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে বিদায় নিতে চাই।”

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টাপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।

অসহযোগ আন্দোলন চলছে। কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে আগের মতোই উত্সুক মানুষের ভিড়। রাজপথে চলছে মিছিলের পর মিছিল—‘আপস না সংগ্রাম—সংগ্রাম সংগ্রাম’। ‘স্বাধীন কর স্বাধীন কর—বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। মিছিল যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন অভিমুখে।

জয়দেবপুরে জনতা এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জয়দেবপুর রাজবাড়ি থেকে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি জওয়ানদের সেনানিবাসে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে পাঞ্জাবি ব্রিগেডিয়ারের নেতৃত্বে সামরিক কর্তৃপক্ষ একদল সেনা পাঠায় জয়দেবপুর। সকাল ১১টায় পাঞ্জাবি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনীর দলটি চৌরাস্তায় অসহযোগ আন্দোলনরত জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। রাজবাড়ির দিকে অগ্রসরগামী সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে জনতার সঙ্গে বাঙালি সেনাদল যোগ দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ বাহিনীর তুমুল গুলিবিনিময় হয়। বাঙালি সৈন্যদলের নেতৃত্ব দেন লে. কর্নেল মাসুদুল হোসেন খান ও মেজর শফিউল্লাহ। পাঞ্জাবি বাহিনী ঢাকা ফিরে যায়। পথে বোর্ডবাজারে জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। মৃতের সংখ্যা ১২৫ বলে জানা যায়। সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। জয়দেবপুরের ঘটনায় রাজধানীতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যাঁরা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণ-আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়।’

ভাসানী বলেন, ইয়াহিয়া অযথা সময় নষ্ট করছেন। তাঁর বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইয়াহিয়ার মনে রাখা উচিত তিনি জনপ্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তাঁর নেই।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply