Friday , 29 March 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্যাতনের ঘটনা মায়ের কাছে বলায় ছাত্রকে পেটাল অধ্যক্ষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি স্কুলের ছাত্রাবাসে নির্যাতনের ঘটনা মায়ের কাছে বলায় এক শিক্ষার্থীকে  মেঝেতে ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর মা সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের পর স্কুলে আসে পুলিশ।
নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী জেলার কসবা উপজেলার বিসারাবাড়ির দুবাই প্রবাসীর একমাত্র ছেলে। সে  উইজডম স্কুল এন্ড কলেজের বিয়াল্লিশ্বর শাখার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্র।
ওই শিক্ষার্থীর পরিবার, পুলিশ, বিদ্যালয় ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী উইজডম স্কুল এন্ড কলেজের সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বিয়াল্লিশ্বর শাখায় ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন।  ছাত্রাবাসের নবম শ্রেণির অন্য তিন বখাটে ছাত্র মেয়ে সুলভ আচরণ করে তাকে উত্তক্ত করে আসছিল। ছাত্রবাসের শোয়ার কক্ষ থেকে শুরু করে শৌচাগার এবং শ্রেণিকক্ষে তাদের নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। বখাটে ছাত্রদের এই নির্যাতন ও উত্ত্যক্তে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই শিক্ষার্থী। গত ১৬মে সোমবার সকালে ওই শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলের বেতন ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ আট হাজার ৩০০টাকা জমা দেন। জেলা শহরে কাজ শেষে বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আবার বিদ্যালয়ে যান তিনি। সেসময় ছেলের চেহারা ও নাক-মুখ ফুলা দেখে তাজে কসবায় বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে ছেলে নির্যাতন ও উত্ত্যক্তের ঘটনা মায়ের কাছে খুলে বলে। রাতেই ওই শিক্ষার্থীর মা ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েমে স্ত্রী নাজমা আক্তারকে বিষয়টি মুঠোফোনে বলেন। বুধবার সকালে ছেলেকে বিদ্যালয়ে দিয়ে শহরে যান ওই শিক্ষার্থীর মা। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম নির্যাতনের শিকার নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে নির্যাতনকারী তিন শিক্ষার্থীকে তিনি দুইটি করে বেত্রাঘাত এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে বুকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বেত্রাঘাত করেন। বিকেলে বিদ্যালয়ে গেলে মাকে ঘটনা খুলে বলে ওই শিক্ষার্থী। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন।
ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, হোস্টেলে আমার ছেলেকে অন্য তিন শিক্ষার্থী বেশ কয়েকদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। তার সঙ্গে মেয়ে সুলভ আচরণ করে। বিষয়টি বাড়িতে এসে ছেলে আমাকে বলে। নির্যাতনের বিষয়টি আমার কাছে বলায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আমার ছেলেকে ডেকে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে পিটিয়েছে। তার বামহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল কালো হয়ে আছে। তিনি বলেন, পুলিশকে অবগত করায় হোস্টেল সুপার আমার সঙ্গে খুবই অশোভন ও খারাপ আচরণ করেছেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, যা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। ছেলে তার সমস্যার কথা মাকে বলবে না তো কাকে বলবে।
ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক নাজমা আক্তার বলেন, আমি তো বকাবকি জানিই না। করব কিভাবে। ওই শিক্ষার্থীর মা বিষয়টি আমাকে জানাইছে। কিন্তু তিনি অপেক্ষা করেন নাই। আর আমরা একটা বাচ্চাকে তো আর বের করে দিতে পারি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী আমাদেরকে না জানিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি পরিবারকে জানিয়েছে। তাই অধ্যক্ষ স্যার তাকে একটু বেত দিয়ে বাড়ি দিয়েছে।
উইজডম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম বলেন, তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে শাসন করেছি। আমাদের না জানিয়ে ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী আগে তার অভিভাবককে জানিয়েছে। তাই তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাকেও হালকা একটু শাসন করেছি। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে। রাতে আমরা এঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেয় না। তাই সকালে শিক্ষার্থীদের ডেকে শাসন করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ে ডিবি পুলিশ নিয়ে আসে। আমরা পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি।
এবিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, এক শিক্ষার্থীর মা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুলে পুলিশ পাঠানো হয়৷ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি৷

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply