Saturday , 4 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মানুষকে সুরক্ষা প্রদানে সম্ভব সব কিছুই করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
--ফাইল ছবি

মানুষকে সুরক্ষা প্রদানে সম্ভব সব কিছুই করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:

মানুষকে সুরক্ষা প্রদানে সম্ভব সব কিছুই সরকার করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে প্রযুক্তির ব্যবহার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করলেও জনগণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। গতকাল রবিবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২২৫টি স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক আগে থেকেই জানতে পারি। আর এসব বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা আমরা এরই মধ্যে নিতে শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সতর্ক থাকব এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সরকার নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, সম্পদ চলে গেলে সম্পদ পাওয়া যায় কিন্তু জীবন চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। এ জন্য জনসচেতনতা বেশি প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, টর্নেডো, বজ্রপাত, ভূমিধস অথবা ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড সব কিছুতেই মানুষকে রক্ষা করা বা সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করণীয় সে ব্যবস্থাগুলো আমরা করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এটা বদ্বীপ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে মাঝে মাঝে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও আসে। সব মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা এগিয়ে যাব।’

মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এদিন দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিব কেল্লার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একই সঙ্গে ৫০টি মুজিব কেল্লার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ উদ্ধৃত করে বলেন, সঠিক দিকনির্দেশনা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, আদর্শ নিয়ে চললে বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সেভাবেই দেশকে গড়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে পুনরায় সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘সকলে মিলে এই দুর্যোগকেও আমরা প্রতিহত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।’

দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের কাজ নিজে করা, বিশেষ করে যুবসমাজ যাতে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে তার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বরিশালের উজিরপুর এবং গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে পরে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্যোগ মোকবেলায় যে সক্ষমতা তা আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। যে কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের’ কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা ছোট্ট ভূখণ্ডের মধ্যে প্রতিনিয়ত দুর্যোগ মোকাবেলা করেও আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছি। সে কারণে আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে সারা বিশ্বে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা নেওয়ার, বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং করার। গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার স্থাপন করায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং সারা বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবেলায় একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে। যেটা বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক।’

দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে তাঁর সরকার নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা এবং অবকাঠামোর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ১৬টি জেলার ৮২টি উপজেলার ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২৬৭টি উপজেলায় ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান আছে। ৬৩টি জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাম তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন মানুষের কাছে খাদ্য সাহায্য দ্রুত যাতে পৌঁছানো যায় তার জন্য সরকার পরিকল্পনা করে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় সরকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করে দিচ্ছে, যাতে যেকোনো দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভলান্টিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব থেকে আশার কথা ভলান্টিয়ারদের অর্ধেকই নারী এবং এটাই সব থেকে আনন্দের কথা নারী-পুরুষ সকলে মিলেই আজকে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়া, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বিস্তৃত করা এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গতির সঞ্চার করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দেশের সবাই একযোগে কাজ করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী; বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, আনসার ভিডিপি থেকে শুরু করে প্রশাসন এবং অন্য সকলে এবং বিভিন্ন ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশন দুর্যোগ সম্পর্কে নানা সচেতনতা সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে ত্রাণ তৎপরতাসহ সব কাজেই অংশগ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ দুর্বিপাকে মানুষের জন্যই মানুষ। মানুষের পাশেই মানুষ থাকবে—সেই চিন্তা থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এরই মধ্যে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনে দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি। অগ্নিনির্বাপণ বা ভূমিকম্প বা ভূমিধস হলে সেখান থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং তাদের উদ্ধারকাজ কিভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এখানে আমাদের ফায়ার সার্ভিস এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০২৫ প্রণীত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ, কাজেই এই ব-দ্বীপ অঞ্চলটাকে সুরক্ষিত করে আমাদের মানুষের জীবনযাত্রাটা যাতে সুরক্ষিত হয় এবং সেটা আজকের জন্য নয় আগামী প্রজন্মের জন্য শতবর্ষের একটা পরিকল্পনা অর্থাৎ ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে, কিভাবে নিরাপদ হবে, মানুষের জীবনযাত্রা কিভাবে উন্নত হবে সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আল্লাহর রহমতে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছি।’

‘আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য রাজনীতি করে,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে কেবল মানুষের কল্যাণেই কাজ করেছে। আজকে ১২ বছরে ক্ষমতায় আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি, যে প্রতিশ্রুতি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা করেছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ এবং আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে একটি মানুষও আর গৃহহীন না থাকে, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। একটি সেমি পাকা ঘর বা এখন দুর্যোগ মোকাবেলায় সহনশীল ঘর আমরা করে দিচ্ছি।’

সূত্র : বাসস।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply